অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের: বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে, সরকার তার বিবেচনার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে বলে মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সরকার চাইলে তাকে বিদেশে যেতে দিতে পারে। যদিও, আইন মন্ত্রণালয় বলছে, আইনি বাধার কারণে তাদের কিছু করার নেই।

আইন বিশেষজ্ঞরা চলতি সপ্তাহে ইউএনবিকে বলেন, সরকার যখন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ অষ্টমবারের মতো বাড়িয়েছে, তখন মিমাংসিত বিষয়(পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন) হিসেবে আবেদনের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইভাবে শর্ত প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতিও দেয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ৪০১(১) অনুসারে খালেদা জিয়াকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দিয়ে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারে। সিআরপিসি ধারা ৪০১ (১) -এর ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেছে, সরকার যেকোনো সময় শর্ত ছাড়াই খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত বা মওকুফ করতে পারে।

গত ১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আইন মন্ত্রণালয় পরামর্শ দেয় যে তাকে প্রথমে কারাগারে যেতে হবে এবং তারপরেই কেবল এ বিষয়ে অনুমতি পেতে আদালতে আবেদন করতে পারেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য, তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জমা দেন।

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, নিষ্পত্তি হওয়া রিট আবেদনটি শুনানির কোনো সুযোগ নেই।আমরা মতামত দিয়েছি যে ৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি করা পিটিশনটি একটি মিমাংসিত বিষয়(পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন)। এটি চালুর আর কোনো সুযোগ নেই।”

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, “সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়াই যে কোনো বন্দীর সাজা স্থগিত করতে পারে বা শাস্তির সম্পূর্ণ বা কোনো অংশ মওকুফ করতে পারে। সিআরপিসি-র ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী সরকার দুটি শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে।”

শাহদীন মালিক বলেন, “প্রথম শর্তটি ছিলো তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস এবং দ্বিতীয় শর্ত ছিলো তাকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে হবে। প্রথম শর্ত পরিবর্তন করে, সরকার কয়েকবার তার কারাদণ্ড-এর স্থগিতাদেশ বাড়িয়েছে। কিন্তু এই শর্ত পরিবর্তনের জন্য খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।এর মানে হলো, সরকার তার বিবেচনার ক্ষমতা দিয়ে এটি করেছে।”

তিনি বলেন, “একইভাবে, দ্বিতীয় শর্ত হলো তাকে অবশ্যই ঢাকায় চিকিৎসা নিতে হবে। সরকার এটি পরিবর্তন করে বলতে পারে যে তিনি যেকোনো 'উপযুক্ত' হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। সরকার যদি তা করে, তাহলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না।”

শাহদীন মালিক আরো বলেন, “আমি আইনমন্ত্রীর সিআরপিসি ধারা ৪০১(১) -এর ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নই। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে কেন আবার কারাগারে যেতে হবে, তা আমার বোধগম্য নয়।”

তিনি বলেন, “সরকার ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে এবং এটি আরো কিছু শর্ত যোগ করতে পারে; যেমন তিনি বিদেশে রাজনীতি করতে পারবেন না এবং তাকে অবশ্যই চিকিৎসার পর দেশে ফিরে আসতে হবে।”

শাহদীন মালিক উল্লেখ করেন,“আমি মনে করি না যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে; সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেই এটি করতে পারে।”

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী শিশির মনির ও ড. শাহদীন মালিকের মতকেই সমর্থ ন করেন। তিনি বলেন, “সরকার যদি সদিচ্ছা দেখায়, তবে খালেদা জিয়াকে অনুমতি নিতে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে কারাগারে যাওয়ার দরকার নেই।”

শিশির মনির বলেন, “সিআরপিসি-র ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সময় সরকার শর্তসাপেক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। তারা (সরকার) এখন কোনো শর্ত ছাড়াই এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সিআরপিসি’র ৪০১(১) ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার যে কোনো সময় তার বিবেচনার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং, সিআরপিসি’র ৪০১ (১) ধারায় খালেদা জিয়ার নতুন আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। তাই, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য আইনত গ্রহণযোগ্য নয়।”

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “সরকার নতুন করে নির্বাহী আদেশ দিলেই, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আইনি বাধা দূর করতে পারে। আর, এটা কোনো ‘মিমাংসিত বিষয়(পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন)’ নয়। কারণ সরকার প্রতি ছয় মাস অন্তর খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে। যেহেতু সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়াচ্ছে, এটা কোনো ‘মিমাংসিত বিষয়(পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন)’ নয়। তাই আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা স্ববিরোধী।”

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “সিআরপিসি-র ৪০১ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, সরকার তার নির্বাহী আদেশে একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে এবং বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে রাষ্ট্রীয় বন্দীদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেয়ার নজির রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি বিষয়ক আবেদন আমলে নেয়নি সরকার।”

এবিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও ক্ষমতাসীন দল আ্ওয়ামী লীগের কয়েকজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

XS
SM
MD
LG