সারাহ কুক উল্লেখ করেন যে তার দেশ একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক-কে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা-কে সম্মান করা হয় এবং দেশগুলো জবরদস্তি, বিভ্রান্তি ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থেকে পছন্দের পথ বেছে নিতে পারে। তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের লক্ষ্য হলো একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো প্যাসিফিক; এমন একটি অঞ্চল যা নিরাপদ ও স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম।”
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ কপ-২৬ এর আগে, বিশ্বব্যাপী উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করেছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেছেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে সই হওয়া যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতিগুলোকে কাজে পরিণত করার জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে যুক্তরাজ্য।
সারাহ কুক বলেন, “চুক্তিটি আমাদের অভিযোজন, প্রশমন ও জলবায়ু অর্থায়নের পাশাপাশি লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।” তিনি বলেন, “জলবায়ু-সংক্রান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, “ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে ভূমিকা স্থিতিশীল, দীর্ঘমেয়াদি ও আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হবে। যেমন আসিয়ান কেন্দ্রীয়তা। আর, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও কার্যকর অংশীদারিত্ব আমাদের লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি। আমরা ইন্দো প্যাসিফিকের আঞ্চলিক অংশীদার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এবং তাদের মাধ্যমে কাজের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “উদাহরণস্বরূপ; ২৫ বছরে আসিয়ানের প্রথম নতুন সংলাপ অংশীদার আমরা এবং সিপিপিপিপি-তে আমাদের সদস্য পদ রয়েছে। হাইকমিশনার আরো বলেন, “একইভাবে আমরা আইআরএ এবং বিমসটেক-এর মতো অন্য আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোকে বঙ্গোপসাগরে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে কাজ করছি।”
সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব ও মূল্যবান সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক দুই দেশের প্রবাসী, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে সুসংহত।” তিনি বলেন, “আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করছি। জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য থেকে শুরু করে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নিয়ম ও কানুনের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা পর্যন্ত এই অংশীদারিত্বের বিস্তৃতি।”
তিনি তিনটি মূল ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো; সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন, নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার (আরবিআইএস) গুরুত্ব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।
১৯৭১ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাইকমিশনার কুক বলেন, “যুক্তরাজ্য এই সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হতে পেরে গর্বিত।” তিনি বলেন, “আমরা এখন একটি আধুনিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে উন্মুখ। যে অংশিদারিত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অর্থনীতিকে টেকসই করতে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কার ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ সমর্থন করে।”
নতুন ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম এর আওতায়, ২০২৯ সাল পর্যন্ত, অস্ত্র ছাড়া সব কিছুতেই বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে যুক্তরাজ্য এবং তারপর ৯৮ শতাংশ পণ্যের জন্য যুক্তরাজ্যের বাজারের প্রবেশাধিকার দেয়া হবে। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, “ডিসিটিএস হলো সবচেয়ে উদার বৈশ্বিক বাণিজ্য অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী।”
হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, “ভারতের সঙ্গে একত্রে যুক্তরাজ্য বঙ্গোপসাগরের জন্য একটি রিজিওনাল মেরিটাইম সেন্টার অফ এক্সিলেন্স তৈরি করছে। এই সেন্টার, বাংলাদেশ-সহ সমগ্র অঞ্চলের মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, অপরাধ মোকাবেলা থেকে শুরু করে ঝড়ের আগাম সতর্কতা প্রদানের মাধ্যমে উপসাগরের স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।”
সারাহ কুক বলেন, “যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে নৌ সহযোগিতার দীর্ঘ ঐতিহ্য, আমাদের স্থায়ী সম্পর্কের ভিত্তি।”