বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব বাধা অপসারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটি।
এই তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (১১ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের ফলাফল জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা এখন স্পষ্ট, সরকার তার প্রধান প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াকে বিদেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁকে হত্যা করতে চায়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকদের বক্তব্যে দেশের মানুষের মতো বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সদস্য ও সমর্থকেরা উদ্বিগ্ন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি আমাদের নেত্রীর (খালেদা জিয়া) জীবন বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব এরকম যেকোনো দেশে পাঠাতে সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশে যাওয়ার পথে আরোপিত অমানবিক প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে অপসারণের আহ্বানও জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি”।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের শর্ত, তাঁর বয়স ও অসুস্থতা এবং বিদ্যমান আইনের অযৌক্তিক ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অশালীন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক বক্তব্য দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অসুস্থ প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি দৃঢ়ভাবে মনে করে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে যেভাবে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি কোনো অপরাধ না করেও নির্ধারিত রায়ের মাধ্যমে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় এবং ইচ্ছাকৃত পরিত্যক্ত কারাগারে পাঠিয়ে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নদীতে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য এবং প্রায় ৮০ বছর বয়সী মৃতপ্রায় ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করার কোনো মানে নেই বলে তার সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রমাণ করেছে যে বর্তমান সরকার তাঁকে জীবিত দেখতে চায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, “কোনো সভ্য, মানবিক ও সুস্থ সাধারণ নাগরিক, কোনো দেশের সরকার প্রধানের কথাই বলা হোক না কেন, প্রতিপক্ষকে নিয়ে এমন শব্দ উচ্চারণ করতে পারেন না। আমাদের নেত্রীর মৃত্যু চায় এমন সরকার অন্যায়ভাবে তার উন্নত চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারের এই মনোভাব ও আচরণ দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়”।
খালেদা জিয়াকে তাঁর প্রাপ্য চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলে যদি খারাপ কিছু ঘটে তাহলে সরকারকে জনগণের রোষের মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিদেশে চিকিৎসার পথ সুগম করতে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছেন তারা। খালেদা জিয়ার (বিদেশে) চিকিৎসা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তারা (সরকার) তাঁকে হত্যা করতে চায়। তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া মানে জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁকে হত্যা করা”।
তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
এর আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বাংলাদেশে তাঁর চিকিৎসার কোনো বিকল্প না থাকায় তাঁকে দ্রুত বিদেশে মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।
হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, লিভার সিরোসিসের কারণে পেট ও বুকে পানি জমে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং সংক্রমণ রোধে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার জন্য দোয়া করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করি বেগম জিয়া যেন আগের মতো এবারও দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যান।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দুটি বইয়ের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে তাঁর মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের বিষয়ে সাংবাদিকদের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা (ডাক্তাররা) বিএনপির মতো কথা বলছে। সরকার আন্তরিক এবং বেগম জিয়া যাতে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা পান তা নিশ্চিত করতে যা যা সহায়তা প্রয়োজন তা করছে এবং প্রয়োজনে আরও কিছু করবে”।
তিনি আরও বলেন, “তাদের যদি বাইরের ডাক্তার আনার প্রয়োজন হয় তবে তারা তা করতে পারে”।
বিএনপির কয়েকজন নেতার বিচারে সাজা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান মাহমুদ বলেন, “দেশের আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে, তারা স্বেচ্ছাচারী রায় দেয় না। নিম্ন আদালতের রায়ে বিএনপি নেতারা সন্তুষ্ট না হলে হাইকোর্টে যেতে পারেন। আরও দুই স্তর উচ্চ আদালত আছে”।
তিনি বলেন, “কিন্তু বাস্তবে দেশ বা আদালতের ওপর বিএনপির আস্থা নেই”।
তিনি বলেন, “বেগম জিয়ার মামলায় ১০০ বারের বেশি তারিখ পেছাতে হয়েছে। সে জন্যই তারা এগুলো বলে। দেশে আইন ও আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করে। সে কারণে আওয়ামী লীগ নেতারও বিচার হয়, শাস্তিও হয়”।