অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো—বিএনপি মহাসচিব ফখরুল


বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল। তারা যা বলে তার উল্টোটা করে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেছিল যে, তারা গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেছে এবং আমরা পরবর্তী নির্বাচনে আবারও একই কাজ করব”।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ছাত্রদের এক কনভেনশনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্য (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ১৫টি ছাত্র সংগঠনের একটি মঞ্চ) ঢাকার ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে এই কনভেনশনের আয়োজন করে।

ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী শাসনামলে ২০১৪ সালে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছিল। যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়েছিল।

তিনি বলেন, “তারা এখন বলছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে। কারণ তারা আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। এটি একটি মুরগিকে শিয়ালের কাছে বর্গা দেওয়ার মতো। আপনাদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে”।

সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে আক্ষেপ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসতে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশি চাপ মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং মানুষ আপনার দুঃশাসনে বিরক্ত হওয়ায় কোনো কৌশল কাজে আসবে না। তারা (জনগণ) দমন, চুরি ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায়। তাই এখনো সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নেন”।

সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা দাবি করে। তাহলে কেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা সমাজ পরিবর্তন এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। “আমরা এখন আমাদের আন্দোলনের সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী, কারণ ছাত্ররা এখন আবার ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে”।

মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে নরকে পরিণত করা ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাতের জন্য তারা কঠোর সংগ্রামে নেমেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গভীর রাতে তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে আটক করে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। “একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা এ্যানিকে যেভাবে সরকারের কুশীলবেরা বেআইনিভাবে আক্রমণ ও নির্যাতন করেছে, আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না”।

তিনি এ্যানির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনি পুলিশি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটি আমাদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক”।

মির্জা ফখরুল বলেন, দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও চলমান ফ্যাসিবাদী সরকারের থেকে মুক্তি পেতে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, “শুধু স্লোগান দিলে চলবে না। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে”।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে সরকার ডিসি ও ইউএনওদের জন্য আধুনিক যানবাহন কিনতে যাচ্ছে।

তিনি আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে”।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে বলে বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠাচ্ছে ও দমন-পীড়ন করছে।

তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সাইফুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের খারাপ কিছু ঘটনা ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে।

মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে টানাটানি করে কোনো লাভ নেই— সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিয়ে টানাটানি করে কোনো লাভ নেই এবং তা বিরোধীদের জন্য কোনো স্বস্তিও বয়ে আনবে না।

তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হবে। এই নির্বাচনে বিএনপি না আসলে আমও যাবে, ছালাও যাবে”।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণ শাখা আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে দলটি এ সমাবেশ করে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের অতীত আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন নিয়ে খেলায় ফাউল করলে তাদের লাল কার্ড দেখাতে হবে।

তিনি বলেন, এবার কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। … নির্বাচন বন্ধ করবেন, ঢাকা অচল করে দেবেন। নির্বাচন বন্ধ করতে আসবেন। সেই খেলা খেলতে দেব না। সন্ত্রাসের খেলা বিএনপিকে খেলতে দেব না।

বিএনপির চলমান আন্দোলন ও কৌশলের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল নিজেই পথ রুদ্ধ করায় বিএনপির ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন সফল হবে না।

আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ডা. হাসান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

XS
SM
MD
LG