বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) মানুষ হত্যাকারী সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, “বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ হত্যাকারী দল। তারা প্রতিদিন আমাদের পদত্যাগ চায় এবং আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের উৎখাত করে। এটা ভালো। তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দিন”।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিএনপিকে বিরোধী দল বলতে চান না, কারণ তাদের সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলই সংসদে আসন পায়”।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবন থেকে ৩৯টি জেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নবনির্মিত ১৫০টি সেতু এবং ১৪টি নবনির্মিত ওভারপাস উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আন্দোলনে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। তবে জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে সম্ভাব্য অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “তারা আন্দোলন করলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের জনগণের কোনো ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না। আমি মনে করি এ ব্যাপারে আপনাদের সবার কিছুটা হলেও সজাগ থাকা উচিত”।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভালো যে বিএনপি-জামায়াত এখন আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, “তারা যদি বাসে আগুন দিতে যায়, তাহলে আমি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবাইকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলেছি, যাতে তারা জনগণের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এবং অগ্নিসংযোগ করতে না পারে”।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ছাড়া তাঁর আর কিছুই নেই। “আমি সব হারিয়েছি- বাবা-মা ও ভাইদের। আমার হারানোর আর কিছু নেই। আমার একমাত্র লক্ষ্য আমার দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। আমরা নিরলসভাবে তা করে যাচ্ছি”।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন এবং পরে উপনির্বাচনে আরেকটি আসন পেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি আসন জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার করুণ অবস্থার প্রতিফলন।
শেখ হাসিনা বলেন, “এখন তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলে। তাদের কথা ও কাজ সবকিছুই ধ্বংসাত্মক। আমি এ বিষয়ে দেশের জনগণকে সতর্ক করতে চাই”। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্জন যেন নষ্ট না হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১১০০ মিটার কেওয়াটখালি সেতু ও ১ হাজার ৪৭১ মিটার রহমতপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের জন্য নবনির্মিত ডিটিসিএ ভবন উদ্বোধন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিআরটিএ অটোমেটেড মোটর ভেহিকেল ফিটনেস টেস্ট সেন্টার, বিআরটিসি বাস ডিপো ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে অবকাঠামো উদ্বোধন করেন এবং ঢাকার মিরপুর, ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ ও বিআরটিএ অফিস থেকে দর্শকেরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার) কি ক্ষমতা ছেড়ে নিরাপদে সরে যাবে, নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবে।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচারণা জোরদার করতে মহাযাত্রা শুরু করবে বিএনপি।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সরকারের পদত্যাগ এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ঘোষিত মহাসমাবেশকে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের আংশিক কর্মসূচি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর বিরোধী দল ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
তিনি নেতা-কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, “মহাসমাবেশের পর ইনশাল্লাহ আমরা এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত থামব না” ।
মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। “আমরা সকল রাজনৈতিক দল, যারা যুগপৎ আন্দোলন করছি তারা এই কর্মসূচি সফল করব”।
তিনি বলেন, “এটি একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আমরা নিশ্চিত করব”।
মির্জা ফখরুল বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার অনেক বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। “কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হলে সম্ভাব্য সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সমাবেশকে সফল করতে হবে”।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, সরকার আসন্ন পতন উপলব্ধি করে বিভিন্ন অশুভ কৌশল অবলম্বন করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিএনপির সমাবেশের আগে সরকার বিএনপির আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
তারা সম্মানের সঙ্গে ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবেন, সে বিষয়ে দুর্গাপূজার শেষ নাগাদ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অবৈধভাবে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অজুহাত হিসেবে সংবিধানকে দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বললেও তারা সবসময় এর ধারা লঙ্ঘন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা বাস্তবতা যে সরকার দমনমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করে জনগণ ও আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না। “সরকার যত তাড়াতাড়ি এটা উপলব্ধি করবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল হবে” ।
মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো বিকল্প না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, সরকার এতটাই নৃশংস ও অমানবিক যে, জীবন বাঁচাতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।