অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বিএনপির সমাবেশ স্থগিত, রবিবার হরতাল আহবান


সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বিএনপির সমাবেশ স্থগিত
সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বিএনপির সমাবেশ স্থগিত

সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল আহবান করেছে বিএনপি। বিএনপি অভিযোগ করেছে যে আ্ওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ যৌথভাবে তাদের সমাবেশে হামলা করেছে। পুলিশ বলেছে, বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন অলিগলি ও রাস্তায় ক্রমাগত রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। তখন বিজয়নগর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে, সমাবেশে যোগ দিতে, বিএনপির নয়াপল্টনের কেনদীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার মানুষ সমেবেত হন।

সংঘর্ষের জেরে বিএনপির সমাবেশ বন্ধ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিজয়নগর-কাকরাইল-রমনা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের জের ধরে বিএনপির মহাসমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়; এর পর এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে পড়ে।শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন অলিগলি ও রাস্তায় ক্রমাগত রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। তখন বিজয়নগর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এসময় বিএনপির সমাবেশস্থলের মাইকের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অনেক নেতা-কর্মী মঞ্চে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর ১টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাকরাইল এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে যাত্রা শুরু করে।

এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের বাধা দিলে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।

সংঘর্ষের কিছু সময় পর কাকরাইল মসজিদ ও রমনার হেয়ার রোড এলাকায় স্বল্প পরিসরে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি

এদিকে, রোববার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। শনিবার ( ২৮ অক্টোবর) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ স্থগিত করে, এই হরতালের ঘোষণা দেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার দুপুরে হ্যান্ডমাইকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি
রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি

নয়াপল্টনে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপি। এর প্রতিবাদে, এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

হামলা ও ভাঙচুর করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা:পুলিশ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, রাজধানীর কাকরাইলে জাজেস রেসিডেন্স কমপ্লেক্সের সামনে বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) কাকরাইল চার্চের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “বিএনপির কয়েকজন সদস্য কাকরাইলে আইডিবি ভবনের সামনে হামলা, ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পর কাকরাইল চার্চ ক্রসিংয়ে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।” পুলিশের কাছে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, “আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।”

বিএনপির ২০০ নেতা-কর্মী আটক

রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে শনিবার প্রথম প্রহরে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, মহাসমাবেশ যোগ দেয়ার জন্য তারা ঢাকার বাইরে থেকে তারা এখানে সমবেত হয়েছিলেন।

পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া জানান, রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল কাকরাইলে অভিযান চালায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, “ঐ এলাকায় (নয়াপল্টন) কতগুলো ককটেল চার্জ করা হয়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পুলিশ ও ডিবি একটি নির্মাণাধীন ভবনে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ২০০ নেতা-কর্মীকে আটক করে। বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন।”

হারুন জানান, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মহাসমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল

সংঘর্ষ ও হরতাল ঘোষণার আগে, বিএনপির নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করে দলটির নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির সমাবেশ
বিএনপির সমাবেশ

জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্দেশ অমান্য করেই শুক্রবার বিকালে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হয়ে রাতভর অবস্থান করেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন।

রঙিন টুপি পরে, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিকৃতি হাতে নিয়ে তারা সমাবেশস্থলে এসে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। কাকরাইল থেকে আরামবাগ পর্যন্ত সড়ক ও গলিতে মানুষের ভিড়ে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেন, তারা ঢাকার প্রবেশপথ ও বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি ও ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়েছেন।

ঢাকার প্রবেশপথে ব্যাপক তল্লাশি, অর্ধশতাধিক আটক

ঢাকার প্রবেশপথ, কেরাণীগঞ্জের কদমতলীর বাবু বাজার সেতু ও হাসনাবাদের পোস্তগোলা ব্রিজ চেকপয়েন্টে তল্লাসী করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব এলাকা থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।

কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন কবির বলেন, “অভিযানে অবৈধ কার্যকলাপের সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদের বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় ৩২ জনকে এবং দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG