গাজা উপত্যকায় সেনা পাঠানোর ২ দিন পর ইসরাইলের সেনাবাহিনী আবার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সম্প্রসারিত যুদ্ধ উদ্যোগের অংশ হিসেবে উত্তর গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা গাজায় হামাস জঙ্গিদের ওপর আরও বেশি বিমান এবং স্থল হামলা চালাচ্ছে।
সেনা কর্মকর্তারা বলেন, তাদের সৈন্যরা এরেজ ক্রসিং-এর কাছে টানেল থেকে বের হবার সময় কয়েকজন হামাস জঙ্গিকে হত্যা করেছে। কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
রবিবার দিনের শুরুতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, তাদের যুদ্ধবিমান গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় হামাসের ৪৫০টি লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে রয়েছে গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র শিফা হাসপাতালের কাছাকাছি একটি অবস্থান। এই হাসপাতালে অসংখ্য রোগী ভর্তি আছে এবং অনেকে এখানে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছেন।
রবিবার দিনের শুরুতে আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) ভিডিও পোস্ট করে বলেন, “হামাসের যোদ্ধারা বেসামরিক দালানের ভেতরে ও নিচে থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, কারণ তারা জানে আইডিএফ যোদ্ধা ও বেসামরিক ব্যক্তিদের আলাদা করে বিবেচনা করে।”
তিনি বলেন, আইডিএফ তাদের “অভিযান সম্প্রসারিত” করছে। এর আগে তিনি “হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন অবস্থান” থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
“আমরা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ের দিকে আগাচ্ছি”, বলেন তিনি। শনিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একই ধরনের মন্তব্য করে সতর্ক করেন, যুদ্ধ “দীর্ঘ ও কঠিন” হবে।
তিনি বলেন, “হামাস গাজার বেসামরিক ব্যক্তিদের মাঝে থেকে ইসরাইলি বেসামরিক ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ছে”। “আমাদের যুদ্ধ হামাসের সঙ্গে, গাজার মানুষের সঙ্গে না”, বলেন তিনি।
হাগারি তার মন্তব্যের শেষে প্রতিশ্রুতি দেন, রবিবার দিনের শেষে দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মানবিক যুদ্ধ বিরতির জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়ার এটি দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হামলা চালানোর পর থেকেই ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। হামাসের হামলায় শিশুসহ মোট ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। সঙ্গে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে সংগঠনটি।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, হামাসকে নির্মূলের জন্য ইসরাইলের অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ৭ হাজার ৭০০ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই মন্ত্রক হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তাদের দেওয়া তথ্যকে ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে হতাহতের সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা হয়নি।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এএফপি ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।