অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই আমাদের মূল লক্ষ্য—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য।

তিনি বলেন, “নির্বাচন আসছে এবং এটি জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য”।

শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের (এএলসিডব্লিউসি) সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অবদান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাস করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, সরকার গঠন করেছে এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করেছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যখনই মানুষ শান্তিতে বসবাস করে, তখনই বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই অস্থিরতা ও অগ্নিসন্ত্রাস থেকে জনগণকে বাঁচাতে হবে, এটাই মূল কাজ”।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার মাধ্যমে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সব দিক থেকে ষড়যন্ত্র করছে। এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আগামী দিনগুলোতে কেউ যেন দেশের অগ্রযাত্রা থামাতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশের মাটিতে অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গি ও দুর্নীতিবাজদের অতীতের মতো প্রতিহত করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে জনগণই অগ্নিসংযোগকারী, দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিদের প্রতিহত করেছিল।

ষড়যন্ত্রকারী, দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি ও অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাস করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বিশ্বাস নিয়েই বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে”।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা জঙ্গিবাদ, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র চোরাচালান, দুর্নীতিবাজ ও এতিমদের অর্থ আত্মসাৎকারীদের চায়, নাকি তারা আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চায়।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরাইলিদের মতো বিএনপি-জামায়াতও সাধারণ মানুষ, হাসপাতাল ও পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতা অনেক বেশি।

বিভিন্ন জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রয়েছে।

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকানির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এ ক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থী জামায়াত ও কমিউনিস্টসহ উগ্র বাম সংগঠনগুলো একযোগে কথা বলছে।

এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আন্দোলনের নামে ভাঙচুরের কারণে কোনো কারখানা ধ্বংস হলে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হবে, শ্রমিকদের রুটি-রুজি ও ভরণপোষণ ব্যাহত হবে।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ১২ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করলেও স্বার্থান্বেষী মহল গার্মেন্টস শিল্পকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নকে শুধু মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল বা বড় ফ্লাইওভারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। “আমরা শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছি”।

একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ জনগণই বানচাল করবে—বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী

এদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মরিয়া উদ্যোগ দেশের জনগণ বানচাল করবে।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় দীর্ঘদিন ধরে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ইঙ্গিতও দেন রিজভী।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ৯ নভেম্বর, ২০২৩।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ৯ নভেম্বর, ২০২৩।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য পুরো জাতির নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তারা আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত ও নিপীড়িত জনগণ তাদের একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার অর্থনীতি ও রাজনীতি ধ্বংস করে দেশকে অনিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার মারাত্মক দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, তারা অনেক বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্যই এই অবরোধ কর্মসূচি। কিন্তু র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে গঠিত পেটোয়া বাহিনী জনগণের সঙ্গে সহিংস আচরণ করছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির ৩৬৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে ৯ হাজার ৮৩১ জন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বেপরোয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণ সড়ক-মহাসড়কে মানববন্ধন করে অবরোধ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এবং আমাদের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে”।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ অবরোধ অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের এমনকি বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে মন্তব্য করে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ রূপ উন্মোচন করছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা একজন রাষ্ট্রদূতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছেন এবং অন্য সিনিয়র নেতারা ক্রমাগত কুৎসিত ও ভয়ানক বক্তব্য দিচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, তারা জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসংযত মন্তব্য করছেন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে মারাত্মক দমনমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশকে একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

XS
SM
MD
LG