ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় জামিন পেয়ে, বাংলাদেশের কাশিমপুর নারী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। গ্রেপ্তার হওয়ার চৌদ্দ মাসের বেশি সময় পর তাকে মুক্তি দেয়া হলো।
সোমবার (২০ নভেম্বর) খাদিজার বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, “আমরা খুব ভোরে এখানে এসেছি। খাদিজা সকাল ৯টায় কারাগার থেকে বের হন। তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আজ। এই কারণে, আমরা এখানে খুব তাড়াতাড়ি এসেছি।”
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) জামিন পান খাদিজা। রবিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জামিনের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। রবিবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও মুক্তির অনুমতি না পাওয়ায়, তাকে ছাড়াই ফিরে আসতে হয় তার স্বজনদের।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) দুই মামলায় ২০২০ সালে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় 'সরকার বিরোধী প্রচারণা চালানোর এবং বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগে দুটি মামলা করে পুলিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দায়ের হওয়া দুটি মামলার অভিযোগ ছিলো প্রায় অভিন্ন।
২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। মামলার বিবরণে বলা হয়, খাদিজা ও দেলোয়ার দেশের বৈধ প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর প্রচারণা চালানোর ষড়যন্ত্র করেন। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা ও বিভাজন সৃষ্টি করে, তাদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিলো।
খাদিজার আইনজীবী জানান, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার সময় খাদিজার বয়স ছিলো ১৭ বছর। কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও খাদিজার জামিন আবেদন বারবার নাকচ করে দেয় ঢাকার একটি আদালত।
এ মামলায়, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি খাদিজার জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ দুই মামলায় খাদিজাতুল কুবরার জামিন চার মাসের জন্য স্থগিত করেন। জামিন শুনানিতে, খাদিজার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া যুক্তি দেন যে খাদিজা তার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওতে যে সব মতামত দিয়েছেন, তার জন্য তিনি দায়বদ্ধ নন।