বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতাল শেষ হওয়ার আগেই, বুধবার (২২ নভেম্বর) থেকে আবার ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সমমনা দলগুলোও অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে, বিএনপির ডাকা চলমান হরতালের দ্বিতীয় দিনেও যানবাহনে আগুন দেয়া হয়। তবে, রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল, বিশেষ করে গণপরিবহণ চলাচল ছিলো প্রায় স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পওয়া গেছে।
আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আবার বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ ঘোষণা দেন। গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচির এটি ষষ্ঠ ধাপ। রিজভী বলেন, “বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।”
তিনি আরো বলেন, “সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য এই অবরোধ। অন্যান্য বিরোধী দল, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করে আসছে; তারাও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।”
এর আগে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রবিবার (১৯ নভেম্বর) থেকে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টায় এই হরতাল শেষ হবে।
ঢাকার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
এদিকে, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন চলছে; হরতাল শেষ হবে মঙ্গলবার সকাল ৬ টায়। নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, এটা বিএনপির প্রথম হরতাল।
সহিংসতার আশঙ্কা সত্ত্বেও সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজধানী ঢাকার সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক ছিলো। এর আগে, সারাদেশে পাঁচবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অবরোধের সময় এবং এই হরতালকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু যানবাহনে আগুন দেয়া হয়।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) হরতালের প্রথম দিনে বিক্ষিপ্তভাবে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সুনামগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন এবং সারাদেশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ট্রেন ও বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি বিরোধী দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে অন্তত ১৪ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং চলাকালে ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ দাবি করছে, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ ও চন্দনাইশ উপজেলায় একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টাকালে চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইটপাটকেল, টায়ার, টর্চ, কেরোসিন ভর্তি বোতল উদ্ধার করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন; ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মোস্তফা, মো. মাইন উদ্দিন, মো. জায়েদ ও মো. জাকির হোসেন প্রকাশ। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুল বলেন, “এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এছাড়া, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রবিবার (১৯ নভেম্বর) আদাবর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাকিব শেখসহ পাঁচজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন; মো. মাসুম (৩২), মো. আলমগীর (৩৮), মো. রাসেল (৩৮) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫৫)।
এদের মধ্যে রাকিব ও জাহাঙ্গীরকে কেরাণীগঞ্জ এবং বাকিদের মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন রাকিব।