গত ৯ নভেম্বর কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-ইয়োমার্ত তোকায়েভ দেশটির রাজধানীতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাজাখ ভাষায় সম্ভাষণ জানালে পুতিন ও তার সফরসঙ্গীরা কিছুটা বিস্মিত হন।
তোকায়েভ ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় কাজাখ ভাষায় কথা বললেও তার এই অভিব্যক্তিতে একটি বিষয় প্রমাণ হয়: কাজাখস্তান ও রাশিয়া এক নয়। মস্কো একটি কৌশলগত মিত্র ও দুই দেশের অতীত ইতিহাস রয়েছে, তবে এখন কাজাখস্তান একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।
মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর নেতারা, বিশেষত, কাজাখস্তানের তোকায়েভ ও উজবেকিস্তানের শাভকাত মিরজিইয়োইয়েভ এখন বিশ্বের নানা দেশ সফর করছেন। তারা বড় বড় বিনিয়োগ চুক্তিতে সাক্ষর করছেন এবং নিজ নিজ দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছেন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তা সত্ত্বেও, পশ্চিম এই ধারা স্বীকার করে নিতে গড়িমসি করেছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও টাইমের মতো প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো, যারা প্রত্যেকেই সাম্প্রতিক সময়ে মধ্য এশিয়াকে “রাশিয়া'স ব্যাকইয়ার্ড” বা রাশিয়ার প্রভাবে থাকা অঞ্চল বলে সম্বোধন করেছে।
উদাহরণ হিসেবে ব্লুমবার্গের কথা বলা যায়। সংবাদমাধ্যমটি চলতি মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্টের মধ্য এশিয়া সফরের সংবাদে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শিরোনাম দিয়েছে “নতুন বন্ধু ও ইউরেনিয়ামের খোঁজে পুতিন প্রভাবিত অঞ্চলে অবতরণ করলেন ম্যাক্রো।”
মধ্য এশিয়া ও পশ্চিমের কয়েকজন গবেষক এই তকমাকে আপত্তিকর মনে করেন। তাদের মতে, একটি অঞ্চলের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চিন্তাধারা থাকা সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক আমলের অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই তকমার ব্যবহার হয়ে থাকে।
উজবেক ও কাজাখ কর্মকর্তাদের মতে, বাস্তবতা অনেক জটিলতায় পূর্ণ। তারা স্বীকার করেন, এ অঞ্চলের নেতারা রুশ আগ্রাসনের ভয়ে গভীরভাবে ভীত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও তারা ভরসা রাখতে পারেন না। মধ্য এশিয়ার সরকারগুলো সারাক্ষণ হন্যে হয়ে ভারসাম্য নামের এক সোনার হরিণ খুঁজে বেড়ায়।
মধ্য এশিয়ার এসব সমস্যা নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেন জো বাইডেনের প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। তিনি উদ্বেগের সুরে বলেন, “কীভাবে আপনি আপনার পণ্যগুলোকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেবেন, আর নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা চালাবেন, যখন আপনার চারপাশে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ইরান ও আফগানিস্তান?”
কাজাখস্তান একটি “মধ্য করিডোর” গড়ে তুলতে আগ্রহী, যার মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার পণ্যগুলোকে তাদের ভূখণ্ড, কাসপিয়ান সাগর ও ককেশাসের মধ্য দিয়ে পরিবহন করে পশ্চিমে পাঠানো যাবে। উজবেকিস্তানের দুই পাশে বিদেশী স্থল-সীমানা থাকায় দেশটি সমুদ্র বন্দরে প্রবেশাধিকার পেতে অত্যন্ত আগ্রহী। তুর্কমেনিস্তান চায় কাসপিয়ান সাগরের মধ্য দিয়ে পাইপলাইন বসিয়ে তাদের মূল প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি সহজ করতে।