অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ নির্বাচন: একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রতীকী ছবি।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দল ও জোটের নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সরকারের একতরফা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের অপচেষ্টা রুখে দেবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে নির্বাচনের তফসিল বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ফকিরাপুল, মতিঝিল, পান্থপথ, ধূপখোলা, মেরুল বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁও, শ্যামপুর কদমতলী, ডেমরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ-অধিকার পরিষদের দুটি উপদল, ১২ দলীয় জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি বিজয়নগর, নয়াপল্টন পুরানা পল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।

এসব মিছিল-সমাবেশ থেকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারের বিরুদ্ধে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।

২৯ অক্টোবর পরবর্তী সময়ের মতো বৃহস্পতিবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল।

অবরোধের সমর্থনে সকাল ৬টার দিকে ফকিরাপুল এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনে রাজপথে নেমেছে।

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার এবার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ জনগণ তার একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নস্যাৎ করবে।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, পুলিশ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ ও ‘গায়েবি’ মামলা করছে, বাড়িঘরে হামলা ও তল্লাশি চালাচ্ছে এবং বাবা-মা-ভাইদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু এরপরও অবরোধ প্রতিহত করা যাচ্ছে না।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সরকার আর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে জনগণকে ফাঁকি দিতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দমন করা যাবে না।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারকে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে হবে। “সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে এবং তাদের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।”

বিএনপির ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মতিঝিল এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবি জানান।

এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের করেন বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

এদিকে, সকাল ১১টায় তোপখানা রোড থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের বের করা একটি মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনী মাঠকে বিষাক্ত ফুলে সাজিয়ে সরকার একমুখী নির্বাচনের খেলা শুরু করেছে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধী দল যেকোনো উপায়ে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করবে।

সাইফুল হক বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বর্তমান সরকারকে শুধু ভোট চোর-ডাকাতই বলবে না, গণশত্রুও বলবে।

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই এসব খেলা বন্ধ করুন... এই খেলা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।”

এ ছাড়া অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকার ১০টি পয়েন্টে মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী।

দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে উত্তরা, মিরপুর, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও শনির আখড়া এলাকায় মিছিল করেছে তাদের নেতা–কর্মীরা।

বিএনপি-জামায়াত আসন্ন নির্বাচন বানচাল করলে পরিণতি ভালো হবে না—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।

জনগণই তাঁর দলের শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে পরিণতি ভালো হবে না।”

ঢাকা জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ নভেম্বর, ২০২৩।
ঢাকা জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ নভেম্বর, ২০২৩।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তেজগাঁওয়ে দলটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি, কারণ জয়ের ব্যাপারে তাদের কোনো আস্থা ছিল না।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করলেও তারা তাদের দাবির সমর্থনে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ চায় দেশে গণতন্ত্র বিরাজ করুক এবং রাজনৈতিক দলগুলো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, “কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগ সেই সুযোগ পায়নি। তাদের শাসনামলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়।"

XS
SM
MD
LG