বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই চলছে। বাছাই প্রক্রিয়ায় রবিবার (৩ ডিসেম্বর) বেশকিছু মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
বাতিল হওয়ার করাণগুলোর মধ্যে রয়েছে অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সই জাল, ঋণ খেলাপি ও হলফনামায় সই না থাকা। রবিবার যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন; ইউটিউবার হিরো আলম, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এবং কক্সবাজারের নৌকার প্রার্থী সালাহউদ্দিন।
রিটার্নিং অফিসাররা জানিয়েছেন, যাদের মনোনয়নপ্রত্র বাতিল হবে, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারবেন।
হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল
একাধিক ত্রুটির কারণে, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি থেকে জমা দেয়া ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। হলফনামায় সই না করা, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা এবং সঠিকভাবে মনোনয়নপত্র পূরণ না করায়, রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। বগুড়া জেলার চারটি আসনে আরো ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বিভিন্ন ত্রুটির কারণে বাতিল করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, “প্রতি বছর আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়, তাতে কিছু আসে যায় না।” চলতি বছরের জুলাইয়ে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেন হিরো আলম। আর, ফেব্রুয়ারিতে, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
হিরো আলম ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের মাঝপথে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
বগুড়া-৪ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে চারটি আসনের মনোনয়নপত্র নির্বাচন করা হয়েছে। জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান,সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বাকি তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।
বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ আপিল করতে চাইলে আগামী ৫-৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করতে হবে।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়ন বাতিল
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের চার বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাই শেষে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন; চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া। এ ছাড়াও সাতজনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সাত প্রার্থী হলেন; আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী, বিএনএফ দলের প্রার্থী আল-সাআদ, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জামাল খান দুদু, এনপিপির প্রার্থী নুরুন্নেসা, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী বশির আহমেদ, জাতীয় পার্টি থেকে শামসুদ্দীন মন্ডল ও বিএনএমের প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাজশাহী-১ আসনে মোট ১১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে সাতজনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।রিটার্নিং অফিসার শামীম আহমেদ জানান, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এক শতাংশ ভোটারের সইসহ তালিকা জমা দিতে হয়। এর মধ্যে চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়ার জমা দেয়া তিন ভোটারের নমুনা স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। আর একজন ভোটার নন।”
ঋণ খেলাপি হওয়ায় নৌকার প্রার্থী সালাহউদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল
ঋণ খেলাপি হওয়ায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে যাচাই-বাছাইয়ের সময় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৪৭ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হওয়ায়, তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জানা যায়, কক্সবাজার জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে 'ফিস প্রিজারভারস' নামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সালাহ উদ্দিন আহমদ সহ অন্য পরিচালকরা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে খেলাপি হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হলেও, ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী সালাহ উদ্দিন আহমদ এখনো সেই ঋণের একজন জামিনদার।
আরো জানা যায়, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো(সিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ী সালাহ উদ্দিন আহমদ একজন ঋণখেলাপি ছিলেন। তাই তার মনোয়নপত্র আইন অনুযায়ী বৈধ বলার সুযোগ নেই।
এই বিষয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “আমার যেসব ঋণ খেলাপি ছিলো, সবকিছু আদালতের মাধ্যমে সমাধান করেছি। তারপরও কেন বাতিল করেছে বুঝতে পারছি না। আমি নির্বাচন কমিশন বরাবর আপিল করবো।আশা করি ফিরে পাবো।”
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “ঋণ খেলাপির অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”
খুলনায় ১৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
খুলনায় তিনটি আসনে ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথমদিনে খুলনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন এই ঘোষণা দেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থক ভোটারদের সই জাল করা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা, হলফনামায় সই না থাকা এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন; খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুয়েল রানা, আতিকুর রহমান, রেজভী আলম, এইচ এম রওশন জামির ও মোত্তজা রশিদী দারা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান।
খুলনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল ও জাতীয় পার্টির শাহীদ আলম। খুলনা-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, অহিদুজ্জামান মোড়ল, জি এম মাহবুবুল আলম ও মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর। আর, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধুর মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, রবিবার খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। এই তিনটি আসনে ৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জনের বাতিল, একজনের অপেক্ষমাণ এবং ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার খুলনা- ১, ২ ও ৩ নম্বর আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।