বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আইন এবং শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) নিজ দপ্তরে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে, সোমবার সভা করেছি। আমাদের কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামীতে আরো কী করতে হবে, তা নিয়েই কথা বলেছি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে।এমন প্রেক্ষাপটে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো কিছু দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু অঙ্গীকার দেখতে চায়; সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছি।”
বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব আরো বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইনেও সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিলো। তাদের চাওয়াগুলো পূরণ করার জন্য এসব সংস্কার করা হয়।”
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “গত ১০ বছরে আমরা অনেক সংস্কার করেছি। শ্রম আইন তিনবার সংস্কার করা হয়েছে। চারবার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের শিল্পায়নের কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিয়েও সোমবার কথা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।”
কোথায় কোথায় সমস্যা আছে; জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, “আমাদের বাণিজ্যে যারা বড় অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা ২৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি করি। যুক্তরাষ্ট্রে আরো ১০০০ কোটি ডলার রপ্তানি করলেও, সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। বরং, বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করছি। তবে, তাদের কিছু দাবি আছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো অনুমোদন করেছি। সে অনুযায়ী আমাদের শ্রম আইনে একটা ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড আছে; একটি কারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ ভাগ সদস্য যদি সংগঠন করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। এটাকে ১০ শতাংশ করার দাবি তারা করেছিলো, আমরা ১৫ শতাংশ করে দিয়েছি।”
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “বেপজা আইনের ক্ষেত্রে সংগঠন করার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন বলি না। আইনে সেটাকে বলা হয়েছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে তারা বলে যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তন করতে হবে। বিষয়টি প্রায় একই। এখনো সংগঠন হচ্ছে, তখনো সংগঠন হবে। কিন্তু নামটি যেন শ্রম সংগঠন হয়। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইন সংশোধন করা হবে। সংশোধন কিভাবে হবে, সেটা সব অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।”
তিনি বলেন, “শ্রম আইনের ক্ষেত্রে তারা মোটাদাগে দুটি জিনিস দাবি করেছে। তারা চাচ্ছে, বেপজাতে শ্রম সংগঠন করার অধিকার দিতে; আর থ্রেশহোল্ডটা কমিয়ে আনা অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত স্মারকে যেসব ইস্যু ছিলো, সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না; এমন প্রশ্নে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর একটা উচ্চ পর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর, বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন।”
বাণিজ্য সচিব বলেন, “তারা বলেছেন আংশিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন তাদের চাওয়াগুলো আরো বেশি বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়াগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়।”
তপন কান্তি ঘোষ আরো বলেন, “আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত, এই পাঁচ বছর। সেক্ষেত্রে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু বাস্তবায়ন হয়নি।”
বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অংশীজন যারা আছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই আইনের সংশোধনী ঠিক করা হবে। ইতোমধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, বিশেষ করে আইএলও সংশ্লিষ্ট আইনে ত্রিপক্ষীয়ভাবেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবে। বেপজার শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি রয়েছে।”
এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে কি না; জানতে চাইলে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব বলেন, “তাদের চাওয়াগুলো পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইন বেপজায় প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন করা হয়েছে; এ অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এজন্য কয়েকদিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে বাণিজ্য সচিবের বৈঠক কালে উপস্থিত ছিলেন; শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী ও ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
