বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি মানবাধিকারের কথা বলতে পারে না; কারণ তারা নিজেরাই চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছেন, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিলো তারা, এখনো করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার মধ্য দিয়ে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করা হয়েছিলো। আর, তা হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে।”
তিনি বলেন, “২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাদের গ্রেনেড হামলায় ২২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ দুইজন অজ্ঞাত পরিচয় নিহত এবং ৫০০ জন আহত হয়েছিলো। সেই হামলার পর বিচার বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট ছিলোেএকটা গাঁজাখুরী। আর, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ তার সংসদ সদস্যদের হাস্যরস ছিলো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির কর্মসূচি বলতে চোরাগোপ্তা হামলা করে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো; আর, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করা। তারা তাদের সন্ত্রাসীদের নামিয়েছে, নেশাখোরদের টাকা দিয়ে এগুলো করাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে দিনমজুরকে সারাদিনের ৮০০-১০০০ টাকা মজুরির জায়গায় ২০০০ টাকা দিয়ে বলছে এটা মেরে দিয়ে আসো। এগুলো দুষ্কৃতিকারীদের কাজ। বিএনপি ও জামায়াত; এ দুটি সংগঠন এখন দুষ্কৃতিকারী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা দুষ্কৃতিকারীদের দমন করতে বদ্ধপরিকর।”
আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন এবং জাতীয় পার্টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই আমরা নির্বাচন করবো। আমাদের কাছে শরিকদের সবসময় গুরুত্ব আছে, সেজন্য জোটগতভাবে আমরা নির্বাচন করছি। আমাদের এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি, ক্ষমতা ও জনসমর্থন আছে। শরিকদের গুরুত্ব দেয়া হয় বিধায় আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
হাছান মাহমুদ আরো বলেন, “আর জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা যেভাবে নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছে, সেজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২০০৮ সালে আমরা জোটগতভাবে মহাজোট গঠন করেছিলাম; গতবারও তারা আমাদের সঙ্গে ছিলো, এবারও আগের মতো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের জনগণের আদালতে বিচার হবে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে জড়িতদের জনগণের আদালতে বিচার করা হবে।” মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বর্তমান সরকার দেশ, জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত ও দাবি উপেক্ষা করে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে জোর দিচ্ছে। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং তাদের সঙ্গে যারা চুক্তি করছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।” তিনি বলেন, “জনগণের আদালত গঠন করা হচ্ছে এবং তাদের প্রতিটি অপকর্মের জবাব দিতে হবে।”
রিজভী অভিযোগ করেন যে প্রহসনমূলক নির্বাচন করতে সরকার বিএনপির হাইকমান্ডকে কারারুদ্ধ করছে।তিনি বলেন, “সরকার গত ১৫ বছর ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম করতে বাধ্য করছে।”
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় শুরু হতে যাওয়া দশম দফা অবরোধ সফল করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। রিজভী বলেন, “আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমাদের একমাত্র আশ্রয় হচ্ছে জনগণ। আমরা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করছি।”