আগামি বছর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের যোগ্যতা সম্পর্কে কলোরাডো রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে চ্য়ালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকে ভিন্ন রকম সিদ্ধান্তে কলোরাডোর আদালত বলছে যে ৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং অতএব তিনি সরকারি কোন দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
এই রায়, যেখানে চারজন বিচারপতি পক্ষে আর তিনজন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, অনুযায়ী কলোরাডোর সেক্রেটারি অফ স্টেটকে মার্চ ২০২৪ ‘এ অনুষ্ঠিতব্য ঐ রাজ্যের রিপাবলিকান প্রাইমারি ভোট থেকে ট্রাম্পকে বাদ দিতে হবে। এই রায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ধারা ৩ , যা কীনা , “অযোগ্যতা ধারা” বা “ বিদ্রোহ ধারা” নামে পরিচিত।
আদালত এই নজিরবিহীন রায়ে বলেছে, “ আমরা খুব হাল্কা ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আমাদের সামনে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি রয়েছে. আমরা তা জানি। আর সেই ভাবে ভয় কিংবা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই এবং এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আমরা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছি যেমনটি আইনে রয়েছে , ঠিক তেমনি ভাবে”।
রায়ে বলা হচ্ছে ট্রাম্প , “ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য” তবে এটা বলা হয়নি যে এই সিদ্ধান্ত সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কীনা। আপিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য কলোরাডোর বিচারকরা ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের রায় স্থগিত রাখছেন । আর সেই পর্যন্ত প্রাইমারি ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
চতুর্দশ সংশোধনী কি ?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোনীসহ চতুর্দশ সংশোধনীও গৃহযুদ্ধের পর অনুমোদন করা হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে সাবেক ক্রীতদাস কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের জন্য নাগরিক ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করা। এই সংশোধনীর প্রথম ধারাটি উল্লেখযোগ্য যেখানে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন কিংবা স্থায়ী বসবাস করছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান এবং নাগরিকদের, “ আইনে সমান সুরক্ষা প্রদান” করা হবে।
চতুর্দশ সংশোধনী কবে পাশ হয়?
১৮৬৬ সালে কংগ্রেস এই সংশোধনীটি পাশ করে এবং রাজ্যগুলি ১৮৬৮ সালে তা অনুসমর্থন করে।
এই সংশোধনীর তৃতীয় ধারায় কি আছে
স্বল্প পরিচিত এই তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে যে যিনি, “ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে সমর্থনের পক্ষে শপথ নিয়েছেন” এবং তারপর সংবিধানটির বিরুদ্ধে, “উত্থান কিংবা বিদ্রোহে জড়িত হয়েছেন কিংবা, “(যিনি ) শত্রুদের সমর্থন বা সুযোগ” দিয়েছেন তিনি , “ সেনেটর, প্রতিনিধি , কিংবা প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না অথবা কোন দায়িত্ব- অসামরিক বা সামরিক- পালন করতে পারবেন না , যদি না কংগ্রেসের সুপার মেজরিটি ( নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ) ভোটে তিনি অনুমোদন পান।
অতীতে এই আইন কি ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে?
সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধের বহু বছর পর যে সময়টাকে রিকন্সট্রাকশান এরা বা পূনর্গঠনের যুগ বলা হয় তখন সাবেক কনফেডারেট কর্মকর্তাদের কোন রকম দাপ্তরিক দায়িত্ব গ্রহণ নিষিদ্ধ করার জন্য এই তৃতীয় ধারা ব্যবহার করা হতো। তবে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫০ বছর এই পদক্ষেপ গ্রহণের কোন প্রয়োজন পড়েনি। ৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে দাঙ্গা দেখা দেয় এবং ট্রাম্পের সমর্থকরা জো বাইডেনের বিজয়ে কংগ্রেসের সত্যায়নে বাধা দেয়ার জন্য জোর করে ক্যাপিটল ভবনে প্রবেশ করে।
ঐ আক্রমণের পর, লিবারেল গোষ্ঠীগুলো কংগ্রেস নির্বাচনে বহু প্রার্থীর যোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করার জন্য এই আইনকে ব্যবহার করেন। এই সব প্রার্থী ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধীতা করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি। তবে তৃতীয় ধারার এক মাত্র সফল প্রয়োগ হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যখন নিউ মেক্সিকো রাজ্যের একজন বিচারক একজন কাউন্টি কমিশনারকে অপসারণ করেন যিনি ৬ জানুয়ারি ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন।
আইনের এই ধারা কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য প্রযোজ্য ?
তিন নম্বর ধারায় পরিস্কার ভাবে এটা উল্লেখ করা হয়নি যে প্রেসিডেন্ট কি এই ধারা অনুযায়ী অযোগ্য বলে হবেন। আর সে কারণেই অনেক নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের যুক্তি হলো, প্রেসিডেন্টকে এ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক জেরার্ড ম্যাগিয়োকা যিনি এই তিন নম্বর ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন, তিনি বলেন, সেটা এই আইনের এবং এর ইতিহাসের সঠিক পাঠ নয়।
সেপ্টেম্বর মাসে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাগিয়োকা বলেন, “ এই প্রস্তাবটি যখন বিবেচনাধীন ছিল , তখন এই বিষয়টি কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয়। কেউ একজন বলেছিলেন, ‘ এটি কি প্রেসিডেন্ট কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর উত্তর ছিল, ‘ হ্যাঁ এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য’”।
ম্যাগিয়োকা আরও বলেন, এই বাক্যাংশ “ officer of the United States” যেমন ভাবে তিন নম্বর ধারায় ব্যবহার করা হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্টের কথাই বলা হয়েছে এবং তাকে এই আইনের আওতায় অযোগ্য ঘোষণার বিধান রয়েছে।
ম্যাগিয়োকা বলেন, “ অ্যান্ড্রু জনসন, যিনি সে সময় প্রেসিডন্ট ছিলেন তিনি নিজেকে বার বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং সেই ভাবে ১৮৬৫ সালের গৃহযুদ্ধের পর পূনর্গঠন চালিয়ে যেতে সেই ভাবে নিজের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন।
অতঃপর কী?
ট্রাম্পের যোগ্যতা সম্পর্কে এই ধরণের মামলা ১৬ টি রাজ্যে দায়ের করা হয়েছে। মিশিগান, মিনেসোটা এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের আদালতে এই মামলা খারিজ হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য আপিল গ্রহণ করলে তা সম্ভবত সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর তাতে এই সব রাজ্যে বিচারাধীন মামলাগুলির উপর ও প্রভাব পড়তে পারে।