অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ নির্বাচন: প্রার্থীদের হলফনামার সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রকাশ করা আয়, সম্পদ ও ঋণের তথ্যের সত্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, টিআইবি তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এ সময় সংস্থাটি হলফনামায় প্রকাশ করা তথ্য যাচাই কারার আহবান জানায়।

টিআইবি ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ‘নো ইউর ক্যান্ডিডেট’ ড্যাশবোর্ড উদ্বোধন উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে, সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

টিআইবি জানিয়েছে যে তাদের প্রত্যাশা হলো, নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাজস্ব বিভাগ প্রার্থীদের ‍হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করবে।

আর, বিশ্লেষনের ওপর ভিত্তি করে, স্বপ্রণোদিত হয়ে সেগুলো যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

বাংলাদেশের নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর হলফনামায় দেয়া আট ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে টিআইবি।

এর মধ্যে রয়েছে; শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা।

প্রতিবেদনের পাশাপাশি, ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হয়েছে। ড্যাশবোর্ডের লিংক: https://www.ti-bangladesh.org/kyc

এর মাধ্যমে সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর সার্বিক, আসন ও দল ভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র দেখা যাবে। এই ড্যাশবোর্ড সকলের জন্য উন্মুক্ত।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়, সর্বশেষ তিনটি ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দ্বাদশ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।

আর, কোনো দল তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেয়নি। তবে, শতভাগ আসনেই কমপক্ষে এক বা অনেক ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থী হয় ক্ষমতাসীন দলের সদস্য বা সমর্থনপুষ্ট।

প্রার্থীদের অর্ধেকের বেশি, প্রায় ৫৭ শতাংশ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রার্থী স্বশিক্ষিত।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। গত ১৫ বছরে ব্যবসায়ী প্রার্থীদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে, বছরে ১ কোটি টাকা আয় করেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা এবার সর্বোচ্চ ১৬৪ জন। তবে কোটি টাকার কম আয় করে এমন প্রার্থীর হার ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

এবার প্রায় ২৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। শতকোটিপতি প্রার্থী সংখ্যায় ১৮; সর্বোচ্চ কোটিপতির প্রদর্শিত সম্পদমূল্য ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোটিপতি প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। অর্থাৎ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, কোটিপতি প্রার্থীদের প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

নবম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। পনেরো বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশে।

এদিকে, স্বতন্ত্র নির্বাচন করা প্রার্থীদের প্রায় ৪৭ শতাংশই কোটিপতি।

এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রায় ২৭ শতাংশের ঋণ বা দায় আছে। যার মোট পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রীদের ৫ বছরে আয় সর্বোচ্চ বেড়েছে ২ হাজার ১৩৪ শতাংশ। একই সময়ে, ৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ শতাংশ এবং ১৫ বছরে বেড়েছে ৬ হাজার ৩৫০ শতাংশ।

হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য পর্যাপ্ত কিনা বা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।

XS
SM
MD
LG