নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ কোম্পানি তাদের কর্মীদের অফিসে উপস্থিতির সময়ের হিসেব রাখবে। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০টির মধ্যে নয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিসে এসে কাজ করার জন্য প্রণোদনা দেবে। যদি কর্মিরা অফিসে ফিরতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জরিপ করা বেশিরভাগ সংস্থা সময়ের হিসেব রাখার জন্য ব্যাজ ছুঁইয়ে ঢোকার (৬২শতাংশ) ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে। তবে অন্যারা ম্যানুয়ালি (৫০ শতাংশ) ওয়াইফাই-এর মাধ্যমে (৫০ শতাংশ), কোম্পানির সেন্সর যন্ত্র (৪৩ শতাংশ) বা কর্মচারীদের ডেস্কের নীচে রাখা সেন্সর (২৮শতাংশ) ব্যবহার করে উপস্থিতি ট্র্যাক করার আশা করে।
ResumeBuilder.com এর রেজ্যুমে এন্ড ক্যারিয়ার কোচ জুলিয়া টুথাক্রে বলেন, “আমি মনে করি কোম্পানিগুলো তাদের ভাল কর্মীদের হারাতে শুরু করবে যখন তারা বুঝতে পারবে যে তাদের ওপর খুব বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। এটা খুব মাইক্রোম্যানেজিং যা মানুষ পছন্দ করে না।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি [কর্মীরা] এমন জায়গা খুঁজে পাবে যেখানে তাদেরকে মূল্য দেয়া হবে তাদের কাজের জন্য, কতটা সময় চেয়ারে বসে থাকলো, তার জন্য নয়।
রেজ্যুমে বিল্ডার জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন এমন সব কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজার, যাদের অন্তত ১১জন কর্মচারী আছে। এই জরিপ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিচালনা করা হয়েছিল।
জরিপে দেখা গেছে যে, কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো উৎপাদনশীলতা। কর্মীদের অফিসে উপস্থিত হয়ে কাজ করার জন্য প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হবে হ্যাপি আওয়ার (৫২ শতাংশ), খাবারের ব্যবস্থা (৪৬ শতাংশ) এবং অফিসের কাজের পরিবেশ আরও ভাল করা (৪১ শতাংশ)। কিছু নিয়োগকর্তা বেতন বৃদ্ধি (৪০ শতাংশ ) এবং চাইল্ড কেয়ারের (৩৭ শতাংশ) মতো সুবিধা প্রদান করবে।
টুথ্যাক্রে বলেন যে খাবারের ব্যবস্থা রাখা ভাল, তবে কর্মীরা যেটা আসলেই চায়, তা হচ্ছে যাতায়াতের খরচ, চাইল্ড কেয়ার, পোষা প্রাণীর জন্য পরিসেবা এবং পোশাকের জন্য টাকা।
জরিপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৩ শতাংশ বিশ্বাস করে অফিসে গেলে কাজ সম্পর্কিত জিনিষগুলোর উন্নতি হবে। আর ২৯ শতাংশ মনে করেন অফিসে উপস্থিত হয়ে কাজ করলে ক্লান্তি কমবে।
“আমি মনে করি যে নিয়োগকর্তারা তাদের সংস্থার কর্মচারীরা যা চান সেটা তারা বুঝতে পারেন না,” টুথাক্রে বলেন। ''আর, যেসব সংস্থার উপর জরিপ করা হয়েছে, তারা যদি না নিজস্ব জরিপ চালিয়ে এইসব তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি সত্যি হতবাক হব যদি সেটা মিলে যায়। একজন ক্যারিয়ার কোচ হিসেবে আমি যা দেখি, তা একেবারেই ভিন্ন।''
প্রতি তিনটি কোম্পানির মধ্যে একটি বলছে, যে কর্মীরা তা (অফিসে গিয়ে কাজ করার শর্ত) মানবে না, তাদের বরখাস্ত করা হবে। অর্ধেকের বেশি (৫৩ শতাংশ) বলেন, তারা কর্মীদের বেতন কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।
অর্থনীতিবিদ সেলকুক এরেন বলেন, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে যে কোম্পানিগুলো উদ্বিগ্ন, তারা কাউকে ছাঁটাই করার পরিবর্তে কিছু কর্মী যদি নিজেরাই চাকরি ছেড়ে দেয় তাহলে তাকেই তারা স্বাগত জানাবে।
“লোকজনকে অফিসে ফিরে যেতে বলার মানে হচ্ছে এটি অর্জনের একটি উপায়। সম্ভবত কোম্পানির উদ্দেশ্য মূলত এটা,” কনফারেন্স বোর্ডের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ এরেন বলেন। “ হয়তো এটাই তারা চান। তারা চাইছেন কর্মী সংখ্যা কমাতে কারণ তারা ২০২৪ সালে মন্দার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।”
যারা অফিসে গিয়ে কাজ করাকে স্বাগত জানাতে পারে তারা হল কম বয়সীরা। তরুণদের নিয়ে গবেষণা করা ডেটা ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি জেনারেশন ল্যাব দেখেছে, ২৭ বছর বয়স পর্যন্ত জেনারেশন জেড কর্মীদের প্রতি ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন অন্তত তিনদিন অফিসে এসে কাজ করতে চায়।
"তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অফিসে ফেরার ক্ষেত্রে সম্ভবত এই প্রজন্মের কাছ থেকে খুব বেশি বাধা আসবে না,'' জেনারেশন ল্যাবের চিফ অপারেটিং অফিসার মতিন মিররামেজানি বলেন। “এবং মেন্টরদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ, সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ তৈরির সুযোগকে তারা আরও বেশী স্বাদর গ্রহণ করবে।''
যে কোম্পানিগুলো জরিপে অংশ নিয়েছে, তারা মনে করে না যে, তাদের কর্মীরা খুব বেশি সময় অফিসে থাকবেন। একানব্বই শতাংশ কোম্পানি চায় তাদের কর্মচারীরা মাসে অন্তত একবার অফিসে আসুক, আর ৭৫ শতাংশ চায় তাদের কর্মীরা সপ্তাহে একবার অফিসে গিয়ে কাজ করুক।
“আমি মনে করি, কর্মীদের ফিরে যেতে অভ্যস্ত করানোর জন্য তারা এটা শুরু করছে,” টুথাক্রে বলেন। “তারপর তা বাড়িয়ে দুইদিন করা হবে, এরপর তিনদিন এবং এভাবে বাড়তে থাকবে। আমি মনে করি এই কৌশলটি আমরা সম্ভবত ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে প্রয়োগ করেতে দেখব।''