পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে 'লবিস্ট সমর্থিত' কোনো বিবৃতির কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
তিনি বলেন, “ড. ইউনূস ইস্যুতে কিছু লোক বেশ কিছু লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। লবিস্টদের বিবৃতির কারণে বিনিয়োগে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
হাছান মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূস বিগত ১২ বছর ধরে আলোচনায় রয়েছেন। তারপরও বাংলাদেশ এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ পায়।
তিনি বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। এর সঙ্গে বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি স্রেফ আইনি বিষয়।”
ড. ইউনূসের কর্মচারীরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে মামলা করেছেন। সেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের এখানে কোনো পক্ষ নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, “ড. ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, তাঁর কর্মচারীরা মামলাটি দায়ের করেছেন। সরকার এখানে কোনো পক্ষ নয়। এটা আদালতের সিদ্ধান্ত। সরকার এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।”
উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি (২০২৪) শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশরাফুল হাসান, ট্রাস্টি নূরজাহান বেগম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহজাহান।
তাদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের কিছু শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, সরকারি ছুটি নগদায়ন না করা এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
৮৪ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বলেন, তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে আদালত তাদের শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
ড. ইউনূস দাবি করেন, তিনি এমন একটি অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছেন যা তিনি করেননি। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এমন একটি অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছি, যা আমি করিনি। আপনি যদি এটাকে ন্যায়বিচার বলতে চান, বলতে পারেন।”
ড. ইউনূসকে হয়রানি না করতে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি না করতে, ২২ জানুয়ারি (সোমবার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সেনেটর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের সেনেটর রিচার্ড জে. ডারবিন ও ইন্ডিয়ানার সেনেটর টড ইয়ংসহ ১২ জন সেনেটের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরকারী সেনেটররা হলেন; রিচার্ড জে ডারবিন, টড ইয়ং, টিম কাইন, ড্যান সুলিভান, জেফ মার্কলে, জিন শাহিন, এড মার্কি, শেরোড ব্রাউন, পিটার ওয়ালশ, শেলডন হোয়াইটহাউস, রন ওয়াইডেন ও কোরি বুকার।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সেনেটরদের চিঠিতে বলা হয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্রমাগত হেনস্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আরও বিস্তৃতভাবে আইন এবং বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করা হচ্ছে।
“তা বন্ধ করার আহ্বান জানাতে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে এই চিঠি লেখা হচ্ছে;” চিঠিতে উল্লেখ করেন ১২ সেনেটর।
সেনেটররা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে ১৫০টির বেশি ভিত্তিহীন মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান তারা।