অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ড. ইউনূসকে নিয়ে ২৪২ জন বিশ্বনেতার খোলা চিঠি, হাছান মাহমুদের বক্তব্য


ড. মুহাম্মদ ইউনূস। (ছবি- ইউএনবি)
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। (ছবি- ইউএনবি)

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা কোনো বিবৃতি নয় বরং একটি বিজ্ঞাপন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের পর হাছান মাহমুদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

“ওয়াশিংটন পোস্ট এটিকে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে। এটি কেবল একটি বিজ্ঞাপন, খবর নয়। আর, স্পষ্টতই, এটি একটি লবিস্ট ফার্ম দ্বারা করা হয়েছিলো;” বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

একই লবিস্ট প্রতিষ্ঠান অতীতে এমন কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বচ্ছ এবং ড. ইউনূসের মামলায় সরকার কোনো পক্ষ নয়।

ইউনূসের সংগঠনের সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিগণ মামলাটি দায়ের করেছেন এবং অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে বিচার চলছে বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবিবার (২৮ জানুয়ারি) বলেছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা নয়, সরকারই তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা দায়ের করেছে।

এ দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সোমবার(২৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “তার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তিনি যা বলেছেন তা সঠিক নয়।”

মামলা এবং আপিল

বাংলাদেশের একটি শ্রম আদালতের দেয়া ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে, রবিবার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিস্তারিত শুনানির জন্য আদালত আপিল গ্রহণ করে এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জামিন মাঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

“প্রাথমিক শুনানির পর, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রম আদালতের নথি তলব করেছে;” জানান ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত, তাদের জামিন দিয়েছে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার একটি আদালত। আরেকটি ধারায়, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে কারাগারে যেতে হয়নি ড. ইউনূসকে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেছিলেন, “যে অপরাধ করিনি, সেই অপরাধর জন্য শাস্তি পেলাম।”

এই মামলা ছাড়াও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাও রয়েছে। এই মামলাকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবীরা।

বিশ্ব নেতাদের সর্বশেষ খোলা চিঠি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ জন নোবেল বিজয়ী সহ ২৪২ জন বিশ্বনেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন পোস্টে এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম।

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন তারা।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ঘিরে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠালেন বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই চিঠি লেখা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ড. ইউনূসকে হয়রানি নিয়ে দ্বিতীয় দফার খোলা চিঠিতে ১০৮ নোবেলজয়ীসহ বিশ্বের ১৯০ জনের বেশি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এরপর গত বছরের আগস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “যার বিরুদ্ধে মামলা, তার সব দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি-না, তারা নিজেরাই দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার, কী কী অসামঞ্জস্য আছে।”

সর্বশেষ চিঠিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, “আমরা আপনার (শেখ হাসিনা) ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। (বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের) এই পর্যালোচনা শুধু ১ জানুয়ারি রায় হওয়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ঘিরে করলেই হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি ঘিরেও করতে হবে।”

চিঠিতে আরো বলা হয়, “এই পর্যালোচনার জন্য একজন জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক আইনজীবীর নেতৃত্বে স্বাধীন আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। আমরা দ্রুতই এটা শুরু করতে চাই। একই সঙ্গে পর্যালোচনা চলাকালে ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

এর আগে, গত বছরের মার্চ ও আগস্ট মাসে একই ধরনের দুটি চিঠি লিখেছিলেন তারা। প্রতিটি চিঠিতেই আগের বারের তুলনায় বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

XS
SM
MD
LG