অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রয়ারি) থেকে। মাসব্যাপী এই বইমেলার সকল আয়োজন শেষ করেছে বাংলা একাডেমি। মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রন্থমেলা সামনে রেখে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি।
প্রস্তুতির শেষ দিনের বিকেল বেলায়ও, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছিলো স্টল ও প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জার কাজ। প্রকাশকরা কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন সাদামাটাভাবে তৈরি করা হচ্ছে, কিছু স্টল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। প্রকাশকরা জানান, এবার পাঠক দর্শকদের বেশি উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন তারা।
উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনীর জানান, “এবারের মেলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি পাঠক দর্শকদের উপস্থিতি দেখা যাবে।” মুনীর বলেন, যোগাযোগের উন্নতির কারণে তিনি এমন প্রত্যাশা করছেন।
“অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাঠক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুনীর। তিনি বলেন, “এই প্রবণতা আমাদের জন্য বড় প্রত্যাশার জায়গা সৃষ্টি করেছে।
মুনীর আরো বলেন, “এটা ইঙ্গিত দেয়, এবারের বইমেলা আগের চেয়ে আরো ইন্টারেক্টিভ হবে।”
শিরীন পাবলিকেশন্সের কর্ণধার মামুন খান বলেন, “বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা, প্রাণের উৎসব।” তিনি জানান যে পাঠকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তাই এবার তার মেলা নিয়ে উচ্চাশা রয়েছে।
প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, চিলেকোঠা পাবলিকেশন স্বত্বাধিকারী ইসরাত জাহান বলেন, “এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেলায় অংশ নিচ্ছি। বাংলা একাডেমি ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলো। আশা করি, উদ্বোধনের আগেই শেষ করতে পারবো।”
গত ৩৪ বছর ধরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার 'লেখক বলছি' মঞ্চ পরিচালনা করে আসছেন টিমুনী খান রীনো। এবারের মেলা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, “আশা করি, লেখক-পাঠক, প্রকাশকসহ এবং আয়োজক কমিটি; সকলেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন।”
তিনি জানান যে লিটল-ম্যাগ ও শিশু চত্বরের জায়গা সঙ্কুচিত হয়েছে। নারী প্রকাশকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। “নারী প্রকাশকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে;” বলেন টিমুনী খান।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অমর একুশে গ্রন্থমেলা সামনে রেখে, সম্ভাব্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি হুমকি মোকাবেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, ডিএমপি কমিশনার বলেন, “দর্শনার্থীরা যাতে কোনো ধরনের শঙ্কা ছাড়াই মেলা ঘুরে দেখতে পারেন সেজন্য আমরা একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলেছি।”
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধন করবেন। মেলায় অংশগ্রহণকারীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাঁচটি নির্ধারিত গেট দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে পারবেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে রয়েছে বিশেষ প্রবেশদ্বার। নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
মেলার নিরাপত্তায়, সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারা দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এছাড়া, অপ্রত্যাশিত ঘটনা তদারকি এবং প্রতিরোধ করার জন্য অসংখ্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
পুরো মেলা এলাকা সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে রয়েছে। মেলা সংলগ্ন এলাকায় বাড়তি টহল ইউনিটের ব্যবস্থা করেছে ডিএমপি। এছাড়া প্রস্তুত থাকবে ডগ স্কোয়াড, সোয়াট টিম এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।
এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি, নিখোঁজ শিশুদের জন্য একটি লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, মায়েদের জন্য একটি নার্সিং সেন্টার, রক্তদান এবং মেলা প্রাঙ্গণে বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা নিশ্চিত করছে কর্তৃপক্ষ।
যোগ দিচ্ছে ৬৩৫ প্রতিষ্ঠান
মেলা আয়োজন নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার প্রকাশনা সংস্থা বাড়ছে। সব মিলিয়ে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান যোগ দিচ্ছে এবাবের মেলায়।
গত বছরের মতো এবারো বইমেলার প্রতিপাদ্য হলো; ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, এ বছর ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি; আর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গতবছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নিয়েছিলো ৬০১ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাব অনুযায়ী, এ বছর প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি।
এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন থাকবে ৩৭টি। এর মধ্যে, একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।