বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে, আরো আলোচনা করা হলে ভালো হয় বলে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইএলও-এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান আনিসুল হক।
“আজ আমরা শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে বসেছিলাম। এর আগে সংশোধনীর কথা হয়েছিলো, সেখানে কিছু নতুন সংশোধনী আনার ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছিলো। সে বিষয়ে আইএলও কিছু বক্তব্য দেয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করেছিলো;” যোগ করেন বাংলাদেশর আইনমন্ত্রী।
তিনি আরো জানান, জেনেভা থেকে আইএলও’র চারজনের একটি টিম আজকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। বৈঠকে শ্রম আইনের প্রায় প্রত্যেকটা ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
“আমরা চাইছিলাম, শ্রম আইন পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনে পাস করার জন্য। কিন্তু, আইএলও প্রতিনিধি দল বলেছেন, তাড়াহুড়ো না করে, আলোচনা করে আরো কিছু করতে পারলে ভালো হবে;” জানান আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তাদের পরিষ্কারভাবে একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে; আইএলও’তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে একটা অভিযোগ ঝুলে আছে, সেই অভিযোগের বিষয়ে কী অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রত্যেকবারই আইএলও প্রতিনিধিরা বলেন যে, এটা মার্চ মাসে সিদ্ধান্ত হবে না, নভেম্বরে যাবে। আবার নভেম্বরে হবে না, মার্চে যাবে। আমি সেজন্য বলেছি মার্চ মাসের গভর্নর বডির মিটিংয়ে যদি বলেন, এটা আবার নভেম্বরে যাবে। সেটা তো আমরা নিতে রাজি না।”
“তখন তারা বলেছেন, কমপ্রিহেন্সিভ লেবার অ্যাক্ট (সমন্বিত শ্রম আইন) তাদের পরামর্শ মিলিয়ে যদি করতে পারি, তাহলে এই মার্চ মাসে আমাদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় প্রতিবন্ধকতা হবে না, বরং আমরা যে আলোচনাগুলো করছি, এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে; আনিসুল হক জানান।
আইনমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন নীতিনির্ধারকরা। এই আইনের কিছু কিছু বিষয় আছে, তা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গেও আলাপ করতে হবে। তাই দুটো বিষয়ে একমত হওয়া গেছ।
এর মধ্যে, একটা হচ্ছে এই মিটিং আবার অনুষ্ঠিত হবে। আইএলও’র উদ্যোগে অংশীজনদের নিয়ে একটি ফ্যাসিলিটি মিটিং হবে। সেখানে যেসব ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য আছে, সেগুলো আলোচনা হবে।
তারা কী পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, তারা বলছেন, ‘সী ম্যান’ এর নাম বদলিয়ে ‘সী ফেয়ারার’ নাম করতে হবে; আর ম্যানেজার ও সুপারভাইজার পদকে ওয়ার্কার হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।
“আরো একটা কথা এসেছিলো, ইউনিভার্সিটি টিচারদের ওয়ার্কার বলতে হবে, আমি সেটা নাকচ করে দিয়েছি। আমি বলেছি, ইউনিভার্সিটি টিচারদের আমরা ওয়ার্কার বলতে পারবো না;” জানান তিনি।
আনিসুল হক আরো বলেন, “কারণ হচ্ছে, ইউনিভার্সিটি টিচাররা চান না যে, তাদের ওয়ার্কার বলা হোক। আমরাও তাদের ওয়ার্কার-এ সংজ্ঞায় আনতে চাই না।”
ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এবিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।”
আনিসুল হক জানান, আগে এই হার ছিলো ১৫ শতাংশ, শুধু যেসব কারখানায় তিন হাজার বা তার ঊর্ধ্বে শ্রমিক আছে তাদের বেলায় প্রযোজ্য ছিলো। এখন সেটা তুলে দেয়া হচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।