অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ভঙ্গুর গণতন্ত্র দেখতে চায় ভারত, সংবাদ সম্মেলনে রিজভী


 বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে ভঙ্গুর গণতন্ত্র চায় ভারত। সে কারণেই তারা গত মাসের (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বলেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের জনগণ ও সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলো সেই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রিজভী উল্লেখ করেন যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় (৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত) নির্বাচনকে ভারত সমর্থন করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারত কি তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে দুর্বল গণতন্ত্র চায়?”

“এটা সারা বিশ্ব স্বীকার করেছে যে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাতানো এবং এতে কারচুপি করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করেছে;” যোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

“নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়... সেই নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সহায়ক হয় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ভারত যদি সেই নির্বাচনকে সমর্থন করে, তাহলে আমাদের ভাবতে হবে যে, ভারত তার নিজের দেশে ইস্পাতের মতো শক্তিশালী গণতন্ত্র চায়, আর, তারা বাংলাদেশে দুর্বল গণতন্ত্র চায়;” উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি আরো বলেন, সরকার উচ্চ স্বরে বলছে কোন কোন দেশ তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে, নির্বাচনকে সমর্থন করছে। “এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা জনসমর্থনহীন একটি বিচ্ছিন্ন সরকার;” বলেন রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন নিয়ে গঠিত হয়নি বলেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারছে না। আর এটা এখন দৃশ্যমান বলে দাবি করেন তিনি।

রিজভী বলেন, “প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি মানুষ এখন দেখছে কীভাবে মর্টার শেল (মিয়ানমার থেকে) এসে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করছে। কিন্তু সরকার নীরব। এমনকি সীমান্তের ঘটনার প্রতিবাদ করে তারা কোনো বিবৃতি দিতে পারছে না।”

তিনি বলেন যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও জোরালো প্রতিবাদ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার নজির স্থাপন করতে পারেনি সরকার। আর, এর মধ্য দিয়ে আবার প্রমাণিত হলো যে, সরকারের জনসমর্থন না থাকায় বিশ্ব এমন একটি সরকারের তোয়াক্কা করে না।

রিজভী অভিযোগ করেন, কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন ও হয়রানি করা হচ্ছে।

“দেশের কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপচে পড়া ভিড় এবং কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বন্দী রাখা হচ্ছে। এগুলো এখন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে;” রিজভী দাবি করেন।

গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে ভারত পাশে ছিলো: হাছান মাহমুদ
ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচনবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিলো, পাশে আছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। একে আরো এগিয়ে নিতে দুই দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক দশক’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. অরবিন্দ গুপ্তের পরিচালনায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনের। অন্য যেকোনো দেশের সম্পর্কের সঙ্গে কখনোই বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক করা যায় না। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের অবদান বাংলাদেশ সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ১৭ লাখ বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসার আবেদন করে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। এটি দুই দেশের পারস্পরিক সুসম্পর্কের পরিচয়ই বহন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “দুই দেশ বাণিজ্য প্রসার, সন্ত্রাসদমন, জনযোগাযোগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শান্তি, নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একযোগে কাজ করছে। দুই দেশের মানুষের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে এই সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।”

বক্তৃতা শেষে হাছান মাহমুদ দুই দেশের জনমানুষের সম্পর্ক, আন্তুর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত, রাজনীতি, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেশনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে চিড় ধরাতে চায়। সেসব অপচেষ্টাকে বর্তমান সরকার সবসময়ই প্রতিহত করে এসেছে।

ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবে মতবিনিময়

সন্ধ্যায় দিল্লিতে ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অফ সাউথ এশিয়ার সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন হাছান মাহমুদ।

ক্লাবের সভাপতি এস ভেঙ্কট নারায়ণ এবং সম্পাদক প্রকাশ নন্দের পরিচালনায় ক্লাব পরিচালনা পর্ষদ ও আন্তুর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা হাছান মাহমুদের বক্তৃতার পর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবারও আমাদের দেশে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন আমাদের দেশে একটি উৎসব। ৭ জানুয়ারি আমাদের দেশে উৎসবের আমেজে নির্বাচন হয়েছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। হাছান মাহমুদ জানান, ২০২১ সালে পর্তুগালে নির্বাচনে ২৯.৭ শতাংশ ভোট পড়ে। রোমানিয়ার নির্বাচনে ৩১.৮৪ শতাংশ এবং হংকংয়ের নির্বাচনে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে। এ দেশগুলোতে কোনো বিরোধী দল ছিলো না।

হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের পর বিভিন্ন দেশ আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫৭টি দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নির্বাচিত সরকারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ ২০টি আন্তর্জাতিক সংগঠন শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়। কিন্তু, বরাবরই বিএনপি ও জামায়াত একে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তারা জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু, বাংলাদেশের জনগণ সেসব অপচেষ্টা রুখে দেয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, কয়েক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। একে আরো এগিয়ে নিতে দুই দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বেশ কতগুলো উদ্যোগ নিয়েছেন, যার সুফল পাচ্ছে জনগণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক রক্তের বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্য যেকোনো দেশের সম্পর্কের সঙ্গে কখনোই বাংলাদেশের সম্পর্ককে তুলনা করা যায় না। তবে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অগ্রগতি বজায় রাখতে প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

XS
SM
MD
LG