অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতরত্ন : প্রাপক প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও, চৌধুরী চরণ সিং, কৃষি বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন


ভারতের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও ও চৌধুরী চরণ সিং এবং ভারতের কৃষিক্ষেত্রে 'সবুজ বিপ্লব'-এর জনক কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও ও চৌধুরী চরণ সিং এবং ভারতের কৃষিক্ষেত্রে 'সবুজ বিপ্লব'-এর জনক কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুক্রবার ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও ও চৌধুরী চরণ সিং এবং ভারতের কৃষিক্ষেত্রে 'সবুজ বিপ্লব'-এর জনক কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ লিখেছেন, পিভি নরসিমা রাও, চৌধুরী চরণ সিং ও এমএস স্বামীনাথনকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে।

পিভি নরসিমা রাও - আজীবন কংগ্রেসি, ভারতে বাজার অর্থনীতির সূচনাকারী

কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাওকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, রামমন্দির নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী, সেইজন্যই তাকে মরনোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া উচিত।

১৯৯২ সালে যখন বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটে, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও।
মূলত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নরসিমা রাওয়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলেও, তিনি যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন, তা মনে করিয়েছেন মোদী। নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ তিনি লিখেছেন, সাহিত্য, ইতিহাস থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে রাওয়ের অবাধ বিচরণের কথা। তিনি উল্লেখ করেছেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সমস্ত ছুঁৎমার্গ ভুলে ভারতে বাজার অর্থনীতির প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলেছিলেন তিনি। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে তারপর কখনও আর টান পড়েনি।


অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সরকারে ১৯৬২-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি আইন ও তথ্য মন্ত্রী ছিলেন; ১৯৬৪–১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন, আইন ও অছি বিষয়ক মন্ত্রী, ১৯৬৭-তে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী, ১৯৬৮–১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী। ১৯৭১–১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রামটেক থেকে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত হন। পেশাদার আইনজীবী রাও ১৯৮৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেই বছরেরই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ তিনি ভারতের নবম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলান। সঙ্গীত, সিনেমা ও থিয়েটার ভালবাসতেন। গল্প-উপন্যাস, রাজনৈতিক ভাষ্য রচনা, তেলুগু এবং হিন্দিতে কবিতা লিখেছিলেন তিনি।

কংগ্রেসের সঙ্গে নরসিমা রাওয়ের সম্পর্ক

আজীবন কংগ্রেসী নরসিমা রাও পাঁচ বছরের সম্পূর্ণ মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ, পররাষ্ট্র-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলালেও শেষ জীবনে দলে ছিলেন পুরোপুরি ব্রাত্য। পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা রাওকে মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস টিকিট দেয়নি।

২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানী দিল্লিতে প্রয়াত রাওয়ের দেহ রাজধানীতে দাহ করার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। রাওয়ের পরিবারের আর্জি অগ্রাহ্য করে দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় আদি নিবাস হায়দরাবাদে।

সেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাওয়ের সৎকারে ভারত সরকারের তরফে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেন শুধুমাত্র তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি ছিলেন রাও মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতায় তখন কংগ্রেসের ওয়াইএসআর সরকার।

গান স্যালুট দেওয়ার পর দেহ চুল্লিতে তোলা মাত্র কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা শ্মশান ঘাট ছেড়ে চলে যান। চরম বিশৃঙ্খলা ও অবমাননাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে নতুন করে দাহের আয়োজক করে পরিবার।

সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের সঙ্গে রাওয়ের বিবাদের মূলে ছিল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসের সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাও।

মসজিদ বাঁচাতে সেদিন কোনও পদক্ষেপ নেননি প্রধানমন্ত্রী রাও। কংগ্রেস দলগতভাবে কোনও পদক্ষেপও নেয়নি। পরবর্তী সময়ে মুসলিম সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাও।

চৌধুরী চরণ সিং - ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী, জাঠদের অবিসংবাদিত নেতা

ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চৌধুরী চরণ সিং। উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় তিনি প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৩৭ সালে ছাপড়াউলি থেকে এবং ১৯৪৬, ১৯৫২, ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালে ওই কেন্দ্রেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত গোবিন্দবল্লভ পন্থ সরকারের সংসদীয় সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালের জুন মাসে তিনি রাজ্যের পূর্ণ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। কংগ্রেস ভাগ হয়ে যাওয়ার পর চরণ সিং ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসের সমর্থনেই দ্বিতীয়বার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তবে, ওই বছরই ২ অক্টোবর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। পড়াশোনা ও লেখালিখি করতে ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০, স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় জননেতা।

নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ তাকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।


উত্তর প্রদেশে বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় চরণ সিং-এর দল আরএলডি
চৌধুরী চরণ সিং-এর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি)-র বর্তমান প্রধান জয়ন্ত চৌধুরী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে তারা আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধতে চলেছেন।

চৌধুরী চরণ সিং-এর ভারতরত্ন প্রাপ্তির খবর রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে জানানোর পরই তার পুত্র তথা আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “এরপর আর বিজেপিকে না বলার মুখ আছে কি! আগের সব সরকার যা করতে পারেনি, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন করে দেখালেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার কতজ্ঞতা জানাতে চাই।"
পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বিজেপি আঞ্চলিক দল আরএলডি-কে অন্তত পাঁচটি আসন ছেড়ে দিচ্ছে যেগুলি থেকে আরএলডি প্রার্থীরা রাজনৈতিক অঙ্কে সহজেই জিতে যেতে পারবেন।
উত্তর প্রদেশে রয়েছে, ভারতের মধ্যে লোকসভার সবচেয়ে বেশি আসন। ২০১৯ সালে লোকসভার ভোটে এই রাজ্যের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৬৬টি দখল করেছিল। এবার বিজেপি শিবিরের পরিকল্পনা ৮০টি আসনই দখলের।

সেই কারণেই সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস ও আরএলডি-র বোঝাপড়া হয়ে যাওয়ার পরেও রাজ্যের বিজেপি শিবির আরএলডি প্রধান জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
দু'বছর আগে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি এবং আরএলডি যৌথভাবে লড়াই করে। সেই বোঝাপড়ার সুবাদে জয়ন্ত চৌধুরীকে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব।

এই ব্যাপারে সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব মন্তব্য করেন, “বিজেপি জানে কখন কাকে নিতে হবে। কীভাবে চিটিং করতে হবে। নইলে এমনি এমনি বিজেপি সবচেয়ে বড় দল হয়ে গেল? এভাবেই তো হয়েছে।”

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে আরএলডি সূত্রে খবর, দলের প্রধান জয়ন্ত চৌধুরী মনে করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধা তার দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে এখনও আসন সমঝোতা হয়নি। দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। এমতাবস্থায় সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস, দুই দলের অভ্যন্তরেই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে আরএলডি-র সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। কারণ পশ্চিম উত্তর প্রদেশে জাঠ সম্প্রদায়ের ভোট পেতে দুই দলের জন্যই আরএলডি-র সমর্থন জরুরি।
পশ্চিম উত্তর প্রদেশের জাঠ অধ্যুষিত এলাকায় রাষ্ট্রীয় লোক দলের এখনও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠরা অনেক দিন ধরে আর্থ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে ছিল। চৌধুরী চরণ সিং ছিলেন জাঠদের অবিসংবাদিত নেতা। জয়ন্ত চৌধুরী এদিন বলেন, "যারা মূলস্রোতে নেই, যারা অনগ্রসর, তারা আজ উদ্বুদ্ধ হবেন। কারণ তারা দেখছেন, তাদের মধ্যে থেকেই একজন ভারতরত্ন সম্মান পেতে চলেছেন। হোক না তা মরণোত্তর।"

ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক - এমএস স্বামীনাথন

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীনতার পরের কয়েক দশক, দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য ভারতকে বিদেশের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু, সেই পরিস্থিতির বদল ঘটেছিল গত শতাব্দীর ছয় ও সাতের দশকে। ভারতে ধান ও গমের উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কৃষিক্ষেত্র ও তার ফলস্বরূপ সারা দেশে খাদ্য সরবরাহ ক্ষেত্রে এভাবে স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথন। তাকে বলা হত 'ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক'। প্ল্যান্ট জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য কাজই ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল।

নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ তাকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

XS
SM
MD
LG