বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) ২০২৩ সালের মে মাসে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে ভুল তথ্য আছে এবং সেখানে বাস্তবতার প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আরএসএফ'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ও ‘র্যাঙ্কি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আরএসএফের ওয়েবসাইটে যে প্রতিবেদন ও র্যাংকিং প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা আছে।
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে ভুল, অর্ধসত্য ও অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৬৩তম দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ক্রমবিকাশ, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য বর্তমান সরকারের অব্যাহত উদ্যোগকে অস্বীকার করা হয়েছে।
“দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার অবাধ স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্রের বিপরীতে, আরএসএফের মূল্যায়ন অগ্রহণযোগ্য, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সত্যের বিচ্যুতি বলে সরকার মনে করে;” জানান প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।
তিনি আরো জানান, আরএসএফের ওয়েবসাইটে ছয় জন সাংবাদিক; সিরাজুল ইসলাম রতন, আহমেদ খান বাবু, গোলাম মোস্তফা রফিক, খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এবং এস এম ইউসুফ আলী; সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তারা আটক হয়ে জেলে আছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, তাদের নিয়ে আরএসএফের এ দাবি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।
বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফ এর প্রতিবেদনে প্রচুর ভুল, অর্ধসত্য, অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে র্যাংকিং করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এ ধরণের সূচক বা র্যাংকিংকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেকেই আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলতে চান যে আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই।”
এ র্যাংকিং পুনর্মূল্যায়নের জন্য আরএসএফকে দাপ্তরিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।
“বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আরএসএফের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বর্ণিত তথ্য অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত, এবং বিভ্রান্তিকর;” যোগ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
তিনি জানান, আরএসএফ এর দাবির বিপরীতে দেখা যায় ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার, সরকারি গণমাধ্যমের চেয়ে বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল সম্প্রসারণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
আরাফাত আরো উল্লেখ করেন, সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ জনগণের ক্ষমতায়ন-সহ উন্নয়নমুখী নানা অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করে।
“জনকল্যাণে সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত সব উন্নয়ন কাজ জনগণের কাছে তুলে ধরে এ দুটি সম্প্রচার মাধ্যম। ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে প্রতিনিয়ত সেতুবন্ধন তৈরি করছে বিটিভি ও বেতার। অথচ আরএসএফ রিপোর্টে উল্টোভাবে বলা হয়েছে;” বলেন বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এ সময় আরো বলেন, সাইবার স্পেসকে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) চালু করে।
“তবে আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে ডিএসএ বাতিল করা হয়। এর পরিবর্তে ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। এই আইনে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত মানহানি মামলায় সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে আইনী তলব করার বিধান রাখা রয়েছে;” প্রতিমন্ত্রী আরাফাত জানান।
তিনি বলেন, আইনগত প্রেক্ষাপট নিয়ে আরএসএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনের উদ্বেগ এই মুহুর্তে প্রাসঙ্গিক নয়। এ বিষয়গুলো আরএসএফ এর পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত এবং তার একটা প্রতিফলন তাদের পরবর্তী প্রতিবেদনে থাকা উচিত।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা বজায় রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।
“তবে বর্তমান সরকার গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সাংবাদিক পরিচয়পত্র নীতিমালা-২০২২ চূড়ান্ত করেছে, ২০১৪ সালে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছে;” বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, মান সম্মত বেতন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব ভালো উদ্যোগ আরএসএফের প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।
তিনি যোগ করেন, আরএসএফ এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান র্যাংকিং একবার বাস্তবতা বহির্ভুত। আরএসএফের এ ধরনের রিপোর্টকে পূর্ণাঙ্গ বলা যায় না। বাংলাদেশ সরকার চায় আরএসএফ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরুক; আর যে প্রতিবেদন অর্ধসত্য এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে তার পুনর্মূল্যায়ন করুক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, “আমরা সত্য দিয়ে অসত্য মোকাবেলা করতে চাই। গণমাধ্যমের পরিবেশ নিয়ে যেখানে সত্যিই উন্নতি করার সুযোগ আছে, সেখানে সরকার তা করবে। আমরা সত্যিকার অর্থে আরএসএফের র্যাংকিং এ উপরে উঠতে চাই।”
আরএসএফ প্রতিবেদন ২০২৩
গত বছরের মে মাসে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০২৩ প্রকাশ করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)।
প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ২০২২ সালের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩তম, স্কোর ৩৫ দশমিক ৩১।
প্রতিবেদনে আরএসএফ বলেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর খড়গের মাত্রা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। এতে প্রকৃত সংবাদ প্রকাশে অনেকটা চাপের মুখে মিডিয়াগুলো। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, অপপ্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
দ্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচক ২০২৩ (ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ২০২৩) এ ৩১টি দেশের পরিস্থিতিকে গুরুতর হিসেবে দেখানো হয়েছে।
স্বৈরাচারী শাসকের অধীনে থাকা দেশগুলোতে সংবাদমাধ্যমে দমন-পীড়নের মাত্রা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩০তম বার্ষিকীতে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে আরএসএফ।
আরএসএফ বলছে, সাংবাদিকতায় ১০টি দেশের মধ্যে সাতটি দেশের পরিস্থিতি কাজের জন্য অনুপযুক্ত। ১০টির মধ্যে তিনটিকে সন্তোষজক বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
২০২৩ এর সূচকে, ৯৫.১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে নরওয়ে। পরের অবস্থানে আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও লিথুয়ানিয়া। সূচকে সবচেয়ে নিচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া (১৮০)। নিচের দিকে দেশগুলো হলো যথাক্রমে উত্তর কোরিয়ার পরে চীন (১৭৯) ও ভিয়েতনাম (১৭৮), ইরান (১৭৭)।
আরএসএফ-এর সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশগুলোর অবস্থান নিচের দিকে। সূচকে ভারতের অবস্থান ১৬১ আর পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ১১ ধাপ উন্নীত হয়েছে শ্রীলঙ্কার। তালিকায় দেশটি ১৩৫তম। ভুটানের অবস্থান ৯০তম, নেপাল ৯৫, তালিকায় ১৫২তম অবস্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান।
মিয়ানমার, তুরস্ক, রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের সংবাদমাধ্যমে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে সরকারগুলো। ২০২৩ এর সূচকে আফ্রিকার দেশগুলোর সংবামাধ্যমের পরিস্থিতিকে খুবই নাজুক হিসেবে উঠে এসেছে।
আরএসএফ প্রতিবেদন ২০২২
বাংলাদেশের সাংবাদিক পুলিশের সহিংসতা, রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা আক্রমণ এবং জিহাদি বা অপরাধী সংগঠনের দ্বারা সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের সম্মুখীন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ২০২২ সালের ৩ মে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
আরএসএফের বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়েছে। এই সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম (স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩)। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের চিত্র
আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশের দুটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার (রেডিও) সরকারি প্রচার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বেসরকারি খাতের গণমাধ্যমের মধ্যে ৩ হাজার প্রিন্ট মিডিয়া আউটলেট, ৩০টি রেডিও স্টেশন, ৩০টি টিভি চ্যানেল এবং কয়েক শ নিউজ ওয়েবসাইট রয়েছে। দুটি জনপ্রিয় চ্যানেল হলো ‘সময় টিভি’ ও ‘একাত্তর টিভি’। দুটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ একটি নির্দিষ্ট সম্পাদকীয় স্বাধীনতা বজায় রেখে পরিচালিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আরএসএফের প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সকল সরকার গণমাধ্যমকে যোগাযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। তার (হাসিনার) দলের (আওয়ামী লীগ) সদস্য ও সমর্থকেরা প্রায়শই তাদের অপছন্দের সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এসব সাংবাদিকেরা যাতে কাজ না করতে পারেন, সে জন্য এবং গণমাধ্যম বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হয়রানি করা হয়। এমন প্রতিকূল পরিবেশে সম্পাদকেরা সতর্কতা অবলম্বন করেন, সরকার যা বলেছে সেগুলোকে যেন চ্যালেঞ্জ না করা হয়”।
আইনি কাঠামো
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে (ডিএসএ) সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের অন্যতম কঠোর আইন বলে অভিহিত করে আরএসএফ বলেছে, “এটি (ডিএসএ) কোনো প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়, যা নির্বিচারভাবে সাংবাদিকদের সূত্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এবং কোনো সাংবাদিক 'জাতির পিতার (…) বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা' অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতার বিরুদ্ধে কিছু পোস্ট করলে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এই আইনি পরিবেশে সম্পাদকেরা নিয়মিত নিজেদের নিজে সেন্সর করেন”।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
আরএসএফের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়, “বেশির ভাগ নেতৃস্থানীয় বেসরকারি গণমাধ্যমের মালিক মুষ্টিমেয় কিছু বড় ব্যবসায়ী। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের সময় আবির্ভূত হয়েছেন। তারা তাদের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাব প্রয়োগ করার জন্য এবং সর্বাধিক লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা সম্পাদকীয় স্বাধীনতার সুরক্ষার চেয়ে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেন। ফলে বেসরকারি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলের সন্ধ্যায় টকশোতে কে অতিথি হবেন তা প্রায়শই সরকারি প্রতিনিধিরাই ঠিক করে দেন”।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
আরএসএফের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, অন্যদিকে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি। এর প্রভাব গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। মূলধারার গণমাধ্যম কখনোই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ইস্যুতে আলোচনা করে না, যদিও বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা ১ কোটি। গত এক দশকে কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী দলগুলো অত্যন্ত সহিংস প্রচারণা চালিয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, বিকল্প মতামতের অধিকার বা ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষাকারী সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার জন্য এই দলগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে”।
নিরাপত্তা
আরএসএফের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা পুলিশের সহিংসতা, রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা আক্রমণ এবং জিহাদি বা অপরাধী সংগঠনের দ্বারা সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের সম্মুখীন। তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এই সহিংসতার কোনো শাস্তি হয় না। প্রায়ই সাংবাদিক ও ব্লগারদের কারাগারে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে রাখার জন্য ডিএসএ ব্যবহার করা হয়। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যা এখনো পুরুষ প্রধান। নারী সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার হন এবং যখন তারা তাদের নিজেদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করেন তখন তারা অনলাইনে ঘৃণামূলক প্রচারণার শিকার হন”।