অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংসদ সদস্যদের থোক বরাদ্দ: জনগণের অর্থের অপব্যবহার নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ প্রকাশ


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বাংলাদেশর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে, সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত এখতিয়ারে খরচের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ (থোক বরাদ্দ) ঘোষণার পর, সরকারি অর্থের অপব্যবহার ও অপচয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টিআইবি এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বরাদ্দ দেয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে, একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছে টিআইবি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাদের নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকা করে নিতে পারবেন।

এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

গত ২০২০ সালের ১২ আগস্ট, ‘সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়; এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় পর্যায়ে অনেক স্কিমের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, স্কিম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ঠিকাদার ও তদারকি কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক যোগসাজশ এবং কমিশন বাণিজ্যের ফলে, স্কিমের কাজের মান প্রত্যাশিত পর্যায়ের ছিলো না। আর, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে এবং স্বার্থান্বেষী মহল লাভবান হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সময়ের সঙ্গে সংসদীয় আসন ভিত্তিক থোক বরাদ্দ বাড়লেও, তার সঠিক ব্যবহার ও সুশাসন নিশ্চিত করার উদ্যোগ বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

“কেননা, সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যই অনুমোদিত কাজের অগ্রগতি তদারকি ও অভিযোগ নিষ্পত্তির একক দায়িত্বে থাকেন;” ড. ইফতেখারুজ্জামান যোগ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, একইসঙ্গে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন সংসদ সদস্যদের একাংশ। ফলে, এইসব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা মনে করি, এই প্রকল্প সংসদ সদস্যের একাংশের জন্য স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে আসছে।”

তিনি আরো বলেন, “ফলে এ ধরনের প্রকল্প, অনিয়ম-দুর্নীতিকে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ২০২০ সালের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করেছিলো টিআইবি।

“কিন্তু, এই সুপারিশমালা আমলে নিয়ে সংসদ সদস্যদের থোক বরাদ্দ ব্যবহারে সুশাসন নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি;” বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

প্রকল্প ও স্কিমসমূহে কার্যকর তদারকি এবং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সততা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

নতুন করে থোক বরাদ্দ কার্যক্রম শুরুর আগের বরাদ্দগুলোর নিবিড় ও নিরপেক্ষ নিরীক্ষার দাবি জানাচ্ছে টিআইবি। একইসঙ্গে, প্রকল্প ও স্কিমসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে।

XS
SM
MD
LG