বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সৃষ্টির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, “আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাই।”
রবিবার (২৫ ফেব্রয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন হাছান মাহমুদ।
পরে, সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “দুই দিক থেকেই সদিচ্ছা আছে। একসঙ্গে আমরা আমাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তৈরি করতে চাই।”
হাছান মাহমুদ জানান, যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় চায়, এটি একটি বড় বিষয়। সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হবে উল্লেখ করেন তিনি।
“আমরাও তাদের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাই;” যোগ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচার, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার তিন দিনের সফরে ঢাকা এসছেন।
আইলিন লাউবাচার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের অভিন্ন অগ্রাধিকার এবং ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করে আমরা আনন্দিত। আর, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।”
বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক পৃথক বার্তায় বলেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশ কীভাবে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
দূতাবাসের বার্তায় বলা হয় যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ। “আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি;” তিনি জানান।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি রাশেদ চৌধুরী প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয় । যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তাদের বিচার বিভাগের অধীনে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে 'কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নেয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে' সফর করছেন।
তারা পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতা, যুব কর্মী এবং মুক্ত ও অবাধ গণমাধ্যম তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো গভীর ও সম্প্রসারিত হবে।
র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাঁচটি পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ অনুসরণ করবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।
এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
