যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।
বিয়ন্সে
আমেরিকার সংগীত জগতে বিপুল জনপ্রিয় এক নাম বিয়ন্সে গেযেল নোলস কার্টার। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জনপ্রিয় গায়িকা বিয়ন্সে একাধারে সংগীত শিল্পী, সংগীত রচয়িতা এবং একজন সফল ব্যবসায়ী। সংগীত জগতের সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্র্যামির ইতিহাসে বিয়ন্সে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী সংগীতশিল্পী হিসাবে বিয়ন্সের সামাজিক প্রভাব বহুমুখী এবং গভীর।
শক্তিশালী কণ্ঠ এবং অসাধারণ ষ্টেজ পার্ফম্যেন্সের গুণে পপ সংগীতের জগতে দ্রুত এবং উজ্জ্বল তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে বিয়ন্স হলেন কুইন বি, কেউ কেউ তাকে গ্র্যামি কুইন বলেও ডাকেন।
বিয়ন্সে বিভিন্ন ধারার গান গাইলেও পপ তারকা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের ৬৫ বছরের ইতিহাসে সর্বাধিক পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী প্রয়াত হাঙ্গেরিয়ান-ব্রিটিশ তারকা সংগীত পরিচালক জর্জ সলতির ৩১ বার গ্র্যামি পুরস্কারের রেকর্ডটি ভেঙ্গেছেন বিয়ন্সে। তিনি ৩২টি গ্র্যামি অর্জন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। গত বছর দলীয়ভাবে তিনি অস্কার জিতেছেন। বিয়ন্সে নোলসই প্রথম গায়িকা, যিনি গ্র্যামির এক আসরে সর্বাধিক ৬টি পুরস্কার জিতেছেন।
বিয়ন্সে ১৯৮১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর টেক্সাসের হিউস্টনে জন্মগ্রহণ করেন। মা টিনা নোল্যান্স লোওসন এবং বাবা ম্যাথিউ নোল্যান্স। দুই বোন স্লাঞ্জ নোলস এবং এঞ্জেলা বিয়ন্সে সংগীত এবং চলচিত্রের সঙ্গে জড়িত।
মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে ছোটবেলার বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেছিলেন গানের ব্যান্ড ডেস্টেনিস চাইল্ড। তার দু’বছর পর ১৯৯২ সালে স্টার সার্চ টেলিভিশন ট্যালেন্ট শো থেকে বাদ হয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েক বছর লেগেছিল উঠে আসতে। তবে ১৯৯৭ সালে পুরোপুরি ভাবে জয়ের মুকুট নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয় তারপর থেকে তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
কৃষ্ণাঙ্গ নারী সংগীতশিল্পী হিসাবে বিয়ন্সের সামাজিক প্রভাব সংগীতজগতের বাইরে অপরিসীম। গান বা বিনোদনের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে তিনি অনুপ্রাণিত এবং ক্ষমতায়ন করেছেন তার অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং মেধা দিয়ে।
তার রচিত “রান দ্য ওয়ার্ল্ড” সহ অনেক গানের ভাষায় সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীবাদ এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় সোচ্চার। পপ সংস্কৃতির অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসাবে, বিয়ন্সে সামাজিক বাঁধাধরা রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে জাতিগত ও লিঙ্গ সমতার পক্ষে এবং কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির উজ্বল দিকগুলোকে তুলে ধরার জন্য নির্দ্বিধায় তিনি তার মিউজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন।
বিয়ন্সে ২০০৮ সালে খুব গোপনে এবং ঘনিষ্ঠদের নিয়ে ৪ এপ্রিল হিপ-হপ শিল্পী যে-জিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান।
বিয়ন্সে কেবলমাত্র "ফর্মেশন" থেকে "ফ্রিডম" এর মতো গান রচনা করেননি, তিনি সংগীতের বাইরে প্রচুর জনহিতকর কাজ করেছেন। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন, পুলিশ বিভাগের সংস্কারের দাবি এবং জাতিগত সমতা সমর্থনসহ বিভিন্ন সামাজিক ন্যায়বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন এবং পদ্ধতিগত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি।