যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।
টুপাক শাকুর
ইংরেজি র্যাপ মিউজিকের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল শিল্পীদের একজন টুপাক শাকুর। সারা বিশ্বে ৭৫ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে তার রেকর্ড। কয়েকটি চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন।
গানের অন্যান্য ধারার সাথে র্যাপের পার্থক্য হলো, সুর আর ছন্দের সাথে কবিতার লাইন মিলিয়ে তৈরি হয় এই মিউজিক। টুপাকের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় যখন তার বয়স মাত্র কুড়ি বছর। অ্যালবামের নাম ছিল 'টুপাক্যালিপস'।
নাতিদীর্ঘ গানের কেরিয়ারে টুপাক বেশ কিছু হিট গান উপহার দেন। তার গানের কথায় সমাজ সচেতনতা লক্ষ্যণীয়। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের নানান সামাজিক সমস্যার কথা এসেছে তার গানে। এসেছে বৈষম্যের কথা। স্বাধীনতার কথা।
টুপাকের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গান হলো 'ডিয়ার মামা' যেখানে তিনি সন্তান হিসাবে মায়ের বন্দনা করেছেন। দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে স্বামীর অনুপস্থিতিতে একজন 'সিঙ্গেল মাদার' প্রতিকূল পরিবেশে কিভাবে সন্তানদের লালন পালন করেন, তার গল্প উঠে এসেছে এই গানে।
১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কের ইস্ট হারলেম এলাকায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় টুপাকের। তার বাবা মা দুজনেই কৃষ্ণাঙ্গদের সংগঠন ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টির সদস্য ছিলেন। টুপাক শৈশবে তার চারপাশে দারিদ্র, মাদকাসক্তি, অপরাধ দেখে বড় হন। আর সেইসব অভিজ্ঞতা তার গানে প্রতিফলিত হয়।
টুপাকের আরও যেসব গান বিপুল জনপ্রিয়তা পায় তার মধ্যে আছে 'হাউ ডু ইউ ওয়ান্ট ইট', 'ক্যালিফোর্নিয়া লাভ' ইত্যাদি।
কিভাবে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জীবনের মান উন্নয়ন করা যেতে পারে, সেটা নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা ছিল। তার গানে এবং সাক্ষাৎকারে তিনি সেসব কথা বলেছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবিতা রচনা, গান এবং অভিনয়ে টুপাকের দক্ষতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ৮৪ সালে কিশোর টুপাক পরিবারের সাথে প্রথমে মেরিল্যান্ড এবং কয়েক বছর পর ক্যালিফোর্নিয়া চলে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিখ্যাত র্যাপার ফিফটি সেন্ট টুপাকের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, '৯০ এর দশকে বড় হয়ে ওঠা প্রত্যেক র্যাপার তার কাছ থেকে কিছু না কিছু নিয়েছে।' 'তিনি নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছেন, তার আগে যারা এসেছে, তাদের সাথে তার পার্থক্য ছিল।'
৯০এর দশকে টুপ্যাক একাধিক অপরাধের অভিযোগে মামলার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে ছিল অস্ত্র সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতন।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে লাস ভেগাসে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি। তার নিহত হবার ঘটনার বিস্তারিত উদঘাটিত না হওয়ায় তিনি কিভাবে মারা যান, তিনি কি আসলেই মারা গেছেন কিনা, এসব নিয়ে কারো কারো মনে সন্দেহ আছে।
প্রায় তিন দশক আগে এই কৃষ্ণাঙ্গ র্যাপার প্রয়াত হলেও শ্রোতাদের কাছে তার গানের আবেদন অব্যাহত আছে।