বাংলাদেশে তেলের সঙ্গে এলএনজি আমদানিতে অর্থায়ন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার হানি সালেম সুনবল।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই আগ্রহের কথা জানান আইটিএফসি প্রধান।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হবে; পর্যায়ক্রমে তা বাড়তে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়াতে আমরা আগ্রহী।”
আইটিএফসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বলেন, “বিদ্যমান সম্পর্ক আরো বাড়াতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।”
“বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার উত্তরোত্তর বড় হচ্ছে। বাংলাদেশে চলমান ও পরিকল্পনাধীন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে;” যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী হামিদ।
তিনি বলেন, তেল রিফাইনারি, তেল ও গ্যাস পরিবহনের পাইপলাইন, সাশ্রয়ী জ্বালানির বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিনিয়োগ ও অর্থায়নের জন্য খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
“আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে চাই। বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণেও আইটিএফসি সহযোগিতা করতে পারে;” উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম বাড়লো
এদিকে, সরকারি, বেসরকারি ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে, খুচরা গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি দশমিক ৭৫ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নতুন দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রেন্টাল এবং সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য বর্তমানে ১৪ টাকার পরিবর্তে ১৪ দশমিক ৭৫ টাকা এবং ক্যাপটিভ, ছোট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩০ দশমিক ৭৫ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এক প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে এই দাম নির্ধারণ করে।
নতুন আইনটি সরকারকে যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখতিয়ারকে পাশ কাটিয়ে সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে।
এর আগে, এই ধরনের গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি। তা ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর আগে বলেছিলেন, গ্যাসের দাম আবার সমন্বয় করা হবে।
বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
অন্যদিকে, আগামী ১ মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মঙ্গলবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে দশমিক ৩৪ টাকা থেকে দশমিক ৭০ টাকা।
বিদ্যুৎ খাতে এখন যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিলো সরকার।
বিপিডিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৮ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ-এর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১১ দশমিক ৩৩ টাকা। আর, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছে ৬ দশমিক ৭০ টাকায়। এতে, প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৬৩ টাকা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।