প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
তিনি বলেন, “আশা করছি, পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।”
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (ভোলা) আলী আজমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত নারী এবং নিম্নআয়ের মানুষসহ দরিদ্র পরিবারগুলোকে স্বস্তি দেবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার সব সময় সচেষ্ট। “নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের স্বাভাবিক দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার সবকিছু করছে। আমরা ইতিমধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়, আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল, আমরা নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে চাই, নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে চাই।”
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মতো কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব করছে বাংলাদেশ।
মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়। এরপরও যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়ায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সবাই যদি বাজার মনিটরিংয়ে সহযোগিতা করে, তাহলে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে পারবে না।”
তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন, তারাবির নামাজ ও সেহরির সময় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, “যদি প্রয়োজন হয় দিনের কোনো এক সময় যখন চাহিদা কম থাকে তখন দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করা যায়। এতে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, বিদ্যুতের সংকট কিন্তু হবে না। বিশেষ করে তারাবি ও সেহেরির সময়ে সংকট হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা সেইভাবে থাকবে।”
নাটোর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. আবুল কালামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ভর্তুকি মূল্যে বিতরণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি, পরিবহনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তারপরও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।”
শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, দেশে জ্বালানি তেল এবং এলএনজির ঘাটতি থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত বা হ্রাস হতে পারে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি যান্ত্রিক সমস্যা। যেকোনো কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায় বা বাধাগ্রস্ত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ১০/১২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকলেও এখন দেশের পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, “কিন্তু আমি মনে করি মাঝে মাঝে লোডশেডিং করাই ভালো। তাহলে মানুষ অতীত ভুলবে না। অন্তত তারা বুঝতে পারবে তারা কোথায় ছিল এবং তারা এখন কোথায় আছে।”
রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় ধরনের ইফতার পার্টির আয়োজন না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বকালে এ নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা রয়েছে, তা হলো-রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন করা যাবে না।”
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, “বেসরকারি পর্যায়ে বড় ইফতার পার্টির আয়োজনকেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি সত্যিই চায় তাহলে সেই টাকা দিয়ে খাবার কিনে গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে পারে।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১২ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।