বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে একটি বাণিজ্যিক ভবনে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মুত্যু-সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের বলেন, “ভর্তি ১২ রোগীর কেউই আশঙ্কামুক্ত নন।”
আগুনের কারণে সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া শুক্রবার সকালে নিশ্চিত করেছেন, মোট ৩৩টি মরদেহ পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে শুক্রবার সকালে জানানো হয়, যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেই ভবনে আটকা পড়া শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে, পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার ও গুদাম পরিদর্শক।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, ভবনটিতে মাত্র একটি দোকান ছিলো। বাকি সবগুলো রেস্তোরাঁ।
তিনি আরো জানান, ভবন জুড়ে গ্যাস সিলিন্ডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো, এগুলো রান্নার জন্য ব্যবহৃত হত। কোনো একটি বা গ্যাসের চুলা বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগতে পারে বলে জানান তিনি। “ভবনটিতে ফায়ার এক্সিটের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না; বলেন মাইন উদ্দিন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার শাহজাদী সুলতানা বলেন, আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পর রাত ১১টা ৫০ মিনিটে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
রাষ্ট্রপতির শোক
ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।
শুক্রবার (১ মার্চ) শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন। এ ছাড়া, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
বেইলি রোডের বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো শোকবার্তায় বলা হয়, তিনি আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং আরো জানায়, আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া, আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিএনপির শোক
ঢাকার বেইলি রোডে ৬ তলা বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত ও আরো অনেকে আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের পক্ষে শোক প্রকাশ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে অবস্থিত বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা বেদনাদয়ক, হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী।
তিনি আরো বলেন, “ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব সহ সকলের মতো আমিও গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের শক্তি ও ধৈর্য দান করুন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আইনের শাসনের অভাব এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য ভূমিকা রেখেছে।
“সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য জনগণকে জবাবদিহির দায়িত্ব সরকার মনে করে না, যা মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও দুর্দশার কারণ;” যোগ করেন মির্জা ফখরুল।