অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলি যুদ্ধে লিপ্ত, বেসামরিক জনগণের দুর্দশা উপেক্ষা করছে সারা বিশ্ব – জাতিসংঘ


২০২৩ সালের ৯ নভেম্বরে চাদ-সুদান সীমান্তের কাছে একটি ছেলে পাহাড়ের উপরে বসে শরণার্থী শিবিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের ১ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় সুদানে চলমান সংঘাতের ফলে ৮১ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৯ নভেম্বরে চাদ-সুদান সীমান্তের কাছে একটি ছেলে পাহাড়ের উপরে বসে শরণার্থী শিবিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের ১ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় সুদানে চলমান সংঘাতের ফলে ৮১ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী সুদানে প্রায় ১১ মাস ধরে চলা সংঘাতের ফলে গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি, সম্পত্তির ধ্বংস সাধন এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের অপরিসীম ক্ষতি এবং দুর্দশার সৃষ্টি করেছে, যাদের কথা আজ বিশ্বের সবাই ভুলে গিয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে একটি মতবিনিময় সংলাপের সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভল্কার টুর্ক বলেন, “সুদানের সঙ্কটটি একটি ট্র্যাজেডি যা বিশ্বব্যাপী স্মৃতিভ্রংশের কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে,”

১৫ এপ্রিল সুদানী সশস্ত্র বাহিনী এবং আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেলরা দেশটিকে "একটি নির্মম, অর্থহীন সংঘাতে" নিমজ্জিত করার পর টুর্ক সুদানে জীবনযাত্রার অবস্থার একটি যন্ত্রণাদায়ক এবং হতাশাব্যঞ্জক মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, “তারা চরম আতংকের একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, এবং তারা ক্রমাগত দায়মুক্তির সাথে ও একাধিক লঙ্ঘনের প্রতি কোনও প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে গেছে।”

জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১৪,৬০০ জন মানুষ নিহত এবং ২৬,০০০ মানুষ আহত হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর’এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সংঘাতটি ৮১ লক্ষ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত করেছে — সুদানের মধ্যে ৬৩ লক্ষ এবং পাঁচটি প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হিসাবে ১৮ লক্ষ মানুষ — যা সুদানকে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু সঙ্কটে পরিণত করেছে।

হর্ন অফ আফ্রিকার জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত হানা সেরওয়া টেটেহ বলেন, “১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সশস্ত্র সংঘাতের সরাসরি ফল হিসেবে সুদান আজ বিশ্বের অন্যতম ভয়ানক মানবিক সংকটের সম্মুখীন । ১ কোটি ৮০ হাজার মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি এবং ২ কোটি পঞ্চাশ হাজার মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।”
হাইকমিশনার টুর্ক বলেন, সুদানে যুদ্ধ শুধু যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ট্যাংক এবং অন্যান্য ভারী কামান ব্যবহার করেই চালানো হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “ধর্ষণ সহ যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে যৌন সহিংসতাকে শুরু থেকেই এই সঙ্কটের একটি সংজ্ঞায়িত এবং ঘৃণ্য বৈশিষ্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।” তার দপ্তর সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতার ৬০ টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে সারা দেশ জুড়ে কমপক্ষে ১২০ জন ভুক্তভোগীর বেশিরভাগই নারী এবং মেয়ে।

হাইকমিশনার টুর্ক বলেন, সুদানের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, “সুদানে কয়েক দশকের অশান্তি এবং দমন-পীড়ন এই সঙ্কটের আগে থেকেই চলে আসছিল, কিন্তু সুদানের জনগণ আজ যে মাত্রার যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছে তার জন্য তারা কখনোই প্রস্তুত ছিল না। যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলিকে অনতিবিলম্বে শান্তির দিকে ফিরে আসতে সম্মত হতে হবে কারণ এর উপরেই সুদানের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।”

XS
SM
MD
LG