অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের আদেশ হাইকোর্টের


বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

ঢাকার বেইলি রোডে একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।

কমিটিতে পুলিশ, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে।

এই কমিটি চার মাসের মধ্যে বেইলি রোডের ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, কারা দায়ী তা খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রতিরোধে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন হবে তার সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

সোমবার (৪ মার্চ) পৃথক দুটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি অগ্নিঝুকিপূর্ণ ভবনে সতর্কীকরণ নোটিশ সাইনবোর্ড আকারে দৃশ্যমান স্থানে টাঙাতে ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে আইন অনুযায়ী স্কুল, কলেজ, শপিংমলসহ রাজধানীর ভবনগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখা কেন অবৈধ হবে না,তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনূছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা।

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গতকাল রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা।

রিটে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে রিটে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ রাজধানীর বেইলি রোডসহ সকল আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দায়ীদের গ্রেপ্তার ও আহত, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ ছাড়া, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, রাজউকের চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। এ দুটি রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি আদেশ দেন ।

বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ড

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘গ্রিন কেজি কটেজ’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ নামে রেস্তোরাঁয় রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা দ্রুত ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকার বিভিন্ন স্টেশন থেকে আটটি ইউনিট সেখানে পৌঁছায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও চারটি অগ্নিনির্বাপক ইউনিটকে যুক্ত করা হয়।

পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা একযোগে কাজ করে রাত ১২টার একটু আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন পরে বলেছিলেন, ওই ভবনে একটাই দোকান ছিল এবং বাকি সব কটা ছিল রেস্টুরেন্ট। ভবনের চারদিকে গ্যাসের সিলিন্ডার ছড়ানো ছিটানো ছিল। ওইগুলোর একটি কিংবা গ্যাসের চূলায় বিস্ফোরণের কারণে আগুন ধরতে পারে।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে রয়েছে।

রবিবার তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে বাসায় ফিরেছেন ১১ জন। এখনো ভর্তি আছেন তিনজন। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুজন।

XS
SM
MD
LG