অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী: ‘অর্থনৈতিক সব সূচক বাড়ছে, অনিশ্চয়তা ও হতাশার কিছু নেই’


অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ফাইল ছবি।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ফাইল ছবি।

অর্থনৈতিক সবগুলো সূচক বাড়ছে, কাজেই এখানে অনিশ্চয়তা ও হতাশার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানী ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ডিসিদের জন্য কোনো পরামর্শ ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি বিষয় তাদের বলেছি। এ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা আজ সর্বোচ্চ স্থানে এসে দাঁড়িয়েছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, “আমাদের যে সূচকগুলো আছে উন্নয়নের, সেগুলো বাড়ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের রেমিট্যান্স ২১৬ মিলিয়ন ডলার। আমাদের সবগুলো সূচকই বাড়ছে। কাজেই আমদের এখানে অনিশ্চয়তার কিছু নেই, হতাশারও কিছু নেই। এগুলো নিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এটা চলছেই।”

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, যেমন বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) যিনি মহাসচিব, তিনি তার জায়গা থেকে বলেছেন যে, তিনি কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। ওরা তো এসব কথাই বলে।

তিনি বলেন, বিএনপির যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম (খালেদা) জিয়া, তিনি বলেছেন এ ব্রিজ (পদ্মা সেতু) ভেঙে পড়বে। এসব কথাবার্তা সিরিয়াস কোনো কিউরিসিজম না। “এটা কীভাবে বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) সিরিয়াসলি বলেছেন, এ ব্রিজ আওয়ামী লীগ বানিয়েছে, এটা ভেঙে পড়তে পারে। কাজেই আপনারা উঠবেন না পদ্মা সেতুতে।”

এগুলো থেকে সত্যিকার যেটা আসল চিত্র, সেটি তুলে ধরার জন্য ডিসিদের আহ্বান করা হয়েছে। তাহলেই মানুষ বুঝতে পারবে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ শেখ হাসিনার যে ডেলটা প্ল্যান ২১০০, সেটি ধরে বাংলাদেশ এগোচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি মানুষের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছে সেটি আপনি রাস্তায় ঘুরলেই দেখতে পাবেন। … মেট্রোরেলে চড়লেই বুঝতে পারবেন মানুষ কতটা খুশি হয়েছে, আশ্বস্ত হয়েছে। নারীরা কীভাবে একা চলতে পারেন মেট্রোতে, তারা সন্তুষ্ট।”

মানুষের মূল নজর মূল্যস্ফীতিতে, সেই ব্যাপারে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খালি ইনফ্লেশনটাই কনসার্ন হয়ে গেল! আর কিছু না? এক কোটি লোককে কার্ড দেওয়া হয়েছে, তারা সস্তা দামে পাচ্ছে।”

আয়কর আদায়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, “হ্যাঁ দিয়েছি। তারা সহায়তা করবেন। তারা যেটা করছেন সেটা করবেন তারা। আরও ভালো করে করবেন, মন দিয়ে করবেন।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল: দেশের অর্থনীতিতে শনির আছর পড়েছে

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শনির আছর পড়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। আওয়ামী সরকারের দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও লাগামহীন দুর্নীতি করে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতোটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।”

তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারে না, হতদরিদ্র মানুষ পেট ভরে দুবেলা খেতে পারে না। অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকেরা উন্নয়নের গালগল্প করে দেশটিকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আর ঋণ করে ঘি খাওয়ার পরিণতিতে দেশ এখন প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা ঋণের চাকায় পিষ্ট। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, ভ্রান্তনীতি গ্রহণ, নীতির সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সংকট থেকে বের হতে পারছে না।

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে নিমজ্জিত দেশের ব্যাংকিং সেক্টর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে।

XS
SM
MD
LG