অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতকে নারীর যৌনাঙ্গ-ছেদনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন সমাজকর্মীরা


ফাইল-বোহরা সম্প্রদায়ের এক পাড়ায় পোশাক কেনাকাটায় ব্যস্ত কয়েকজনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ভারতীয় দাউদি বোহরা নারীরা। মুম্বাই, ভারত। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
ফাইল-বোহরা সম্প্রদায়ের এক পাড়ায় পোশাক কেনাকাটায় ব্যস্ত কয়েকজনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ভারতীয় দাউদি বোহরা নারীরা। মুম্বাই, ভারত। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।

বিশ্বজকুড়ে নারীদের যৌনাঙ্গ-ছেদনের (এফজিএম) রীতি ও প্রচলন সম্পর্কে জাতিসংঘ শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের একটি শাখা দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রীতির প্রচলনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

শুক্রবার প্রকাশিত ইউনিসেফের ৩১টি দেশের তালিকায় ভারত নেই। তবে, ভারতে এফজিএমের ব্যাপকতা (যদিও এ দেশের জনসংখ্যার তুলনায় অল্প এবং দীর্ঘ গোপনীয়তায় আবৃত) প্রকাশ্যে আসছে।

ইসলামের শিয়া সম্প্রদায়ের ইসমাইলি শাখার একটি উপধারা দাউদি বোহরাদের মধ্যে এই রীতির অনুশীলন সবচেয়ে বেশি। গোটা বিশ্বে বোহরাদের আনুমানিক সংখ্যা ১০ থেকে ২০ লক্ষ। সাম্প্রতিক একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বোহরা মেয়েদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই যৌনাঙ্গ-ছেদন করা হয়।

দাউদি বোহরা সক্রিয়বাদী ও এফজিএম-রোধী প্রচার গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরেফা জোহারি বলেন, “আমাদের সংখ্যা অল্প হলেও আমরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ। অবিচার ও ক্ষতিকর অনুশীলনের বিরোধিতা করতে হবে; এগুলি কত সংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করছে সে বিচারে নয়, বরং এগুলি ভুল বলে এর বিরোধিতা করতে হবে।”

ধনী ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দাউদি বোহরাদের অধিকাংশই ভারতের গুজরাত প্রদেশে বাস করে। পাকিস্তান, ইয়েমেন, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকাতে এরা অল্প সংখ্যায় রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারীর যৌনাঙ্গ-ছেদন নামে পরিচিত এফজিএম-এর সংজ্ঞা দিয়েছে যে, “অ-চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে নারীর যৌনাঙ্গের বহিরাবরণের আংশিক বা সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা অথবা নারীর যৌনাঙ্গে অন্যান্য ক্ষত সৃষ্টি করার পদ্ধতি” এটি। এই সংস্থা বলেছে, এই আচারের কোনও স্বাস্থ্যগত লাভ বা সুবিধা নেই এবং একে মেয়ে ও নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রকাশিত ইউনিসেফের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৩ কোটির বেশি জীবিত মেয়ে ও নারী এফজিএম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। আট বছর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরিসংখ্যানের তুলনায় ৩ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। এফজিএমে ‘আক্রান্ত’দের সর্বমোট সংখ্যার ১৪.৪ কোটির বেশি রয়েছে আফ্রিকায়, এরপর এশিয়া (৮ কোটি) ও মধ্যপ্রাচ্য (৬০ লক্ষ)।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শেলবি কোয়াস্ট বলেন, ইউনিসেফের প্রতিবেদনে ভারতকে “অবশ্যই” অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।

কমপক্ষে ৯২টি দেশে এফজিএম প্রচলিত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই রিপোর্টে কেবলমাত্র “হিমশৈলের চূড়াটুকু” ধরা পড়েছে।

জোহারির সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ভারতের কেরল অঙ্গরাজ্যের ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলির মধ্যেও এফজিএমের প্রচলন রয়েছে।

জোহারি বলেন, নারীর যৌনাঙ্গ-ছেদনের সঙ্গে আফ্রিকার দীর্ঘকালের যোগ ছিল। তবে, ভারত ও এশিয়ার অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে এফজিএমের সাম্প্রতিক “তথ্য” দেখিয়ে দিয়েছে যে, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।

XS
SM
MD
LG