বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের আগুনের ঘটনার পর, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে মোট কতজন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এর তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই তালিকা দাখিলের নির্দশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে কেন শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, শ্রম ও কর্ম সংস্থান সচিব, আইন সচিব ও আইজিপিকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাসুদ আর. সোবহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।এর আগে, সোমবার (১১ মার্চ) ব্যারিস্টার মাসুদ আর সোবহান ও ব্যারিস্টার ফাতেমা এস চৌধুরী বাদী হয়ে এই রিট আবেদন করেন।
রিটের বিষয়ে, ব্যারিস্টার ফাতেমা এস চৌধুরী জানান, বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, অভিযানের সময় অন্তত ৮শ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। এসব শ্রমিক কোনো ভবনের বা রেঁস্তরার মালিক নন; তারা কর্মচারী। মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন; আর তারা নির্দোষ ব্যক্তি।
তিনি আরো বলেন, “তাদেরকে বেআইনিভাবে ধরে নিয়ে কারাগারে কয়েদিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। এজন্য তাদের গ্রেপ্তারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে আইজিপিকে গ্রেপ্তার শ্রমিকদের তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।”
আগুন ও অভিযান
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব অভিযানে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার এবং ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে, ৮৮৭টি ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অভিযান চালাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (রাজউক)। কয়েকটি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করেছে তারা। অভিযানে আবাসিক ভবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে বানানো রোস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কোথাও কোথাও গ্রেপ্তার ও জরিমানা করা হচ্ছে। রাস্তার পাশে ছোট খাবারের দোকান থেকেও অনেককে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সরকারি সংস্থাগুলোর চালানো এসব অভিযানের সমালোচনা করেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। এই পদক্ষেপ ‘হয়রানিমূলক’ বলে দাবি করছে তারা।
এর আগে, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির করা এক রিটের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল জারি করেছেন। রুলে রাজধানীর হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযানের নামে হয়রানি করা কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।