জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মোহাম্মদ মারা গেছেন। বুধবার(১৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৃত্যশিল্পী ও শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নীপা।
মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে নীপা বলেন, “সাদি মহম্মদের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি এক ধরণের ট্রমার মধ্যে চলে যান। মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি।”
“বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতার করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমরা মনে করছি;” জানান শামীম আরা নীপা।
মোহাম্মদপুরের বাসভবনে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। তার এই মৃত্যুকে স্বেচ্ছামৃত্যু বলে মনে করছেন স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “আমি খবর পেয়েছি।”
তার ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ জানান, আজো তানপুরা নিয়ে তার বড় ভাই সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে সাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা।
সাদী মোহাম্মদ একজন শহীদ পরিবারের সন্তান। তার ভাই শিবলী মোহাম্মদ বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী।
সাদী মোহাম্মদ সঙ্গীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। তার প্রথম অ্যালবাম ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে।
এরপর, ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা একাডেমি সাদী মোহাম্মদ-কে ১০১৫ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার ভূষিত করে।
সাদী মোহাম্মদের বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিলো স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র। একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ।
পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
গত বছরের জুলাই মাসে সাদী মোহাম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা।