ঢাকা পৌঁছেছেন সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-র শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তিনি চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে, তাকে বহনকারী বিশেষ ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গত বছরের অক্টোবরে ইউএনডিপি শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এটি তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং ইউএনডিপির এক্সটারনাল রিলেশনস ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক উলরিকা মদির তার সঙ্গে রয়েছেন।
উলরিকা মদির জানান, বাংলাদেশ অতি দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর অধিকার সুসংহত করার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু অভিযোজন, দুর্যোগ ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটালাইজেশনের মতো খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
“বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশটি। সুইডিশ রাজকন্যার এ সফর বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে একটি অনন্য সুযোগ;” যোগ করেন উলরিকা মদির।
রাজকন্যা ভিক্টোরিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়োহান ফরশেল।
সুইডিশ রাজকন্যা বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল উন্নয়নের ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যক্ষ করতে মাঠ পর্যায়ে যাবেন এবং সরকার ও ইউএনডিপি কর্তৃক বাস্তবায়িত, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করতে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগগুলো সরজমিন পরিদর্শন করবেন।
বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার জানান, টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু মোকাবেলা কার্যক্রম এবং সমতার পক্ষে সুইডিশ রাজকন্যা দীর্ঘদিন ধরে বলিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।
সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই ভূমিকায় তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং কাউকে পেছনে না ফেলে একটি টেকসই আগামীর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
ডিজিটাল অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ
ডিজিটাল রূপান্তরে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসে ‘ইনোভেট টুগেদার ফর #জিরোডিজিটাল ডিভাইড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
সোমবার (১৮ মার্চ) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার-টু-ইনোভেট (এটুআই) ।
অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং কাউকে পেছনে ফেলে নয়, দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামীর বাংলাদেশকে ডিজিটাল বৈষম্যমুক্ত করে গড়ে তোলার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং ফ্রিল্যান্সার সাপোর্ট প্রোগ্রামের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজনের সেতুবন্ধনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুকরণীয় যাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কীভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিসহ নানা খাতে সুযোগ তৈরি করেছে তা তুলে ধরেন।
উপকূলবাসীর জীবনমান দেখবেন রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জীবনমান দেখতে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) খুলনার কয়রা উপজেলায় সফর করবেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া।
ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার আগমনকে ঘিরে কয়রা উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করা হয়েছে। তার পরিদর্শনের জায়গাগুলো পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছা দূত হিসেবে, ১৯ মার্চ তিনি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলা পরিদর্শন করবেন।
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের জীবনমান নিজ চোখে দেখবেন রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া।
এছাড়া, লিঙ্গ সমতা, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তর পর্বেক্ষণ করবেন তিনি।
এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং দুর্যোগ কবলিত কয়রার চ্যালেঞ্জগুলো পরিদর্শন করবেন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহদুদ বলেন, “সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া আমাদের পরিষদ দফতরে আসবেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।”
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথির কয়রায় আগমন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামান জানান, রাষ্টীয় অতিথিকে বরণের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।