বাংলাদেশের আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায়, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ ও চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরিসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এই রায় ঘোষণা করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রসিকিউটর মীর আহাম্মদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত ৯ জন
তানভীর মাহমুদ, তানভীর মাহমুদের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম, হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আব্দুল মালেক, আব্দুল মতিন ও তসলিম হাসান।
বাকি ৮ জন
সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান।
এই আট জনের মধ্যে, জামাল উদ্দিনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ছিলো গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে থেকে বের করে, আরো দুইজনের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি চেয় আবেদন করা হয়।
আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে দুইজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। সাক্ষীদের বক্তব্য, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন।
দুদকের মামলা
জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে, হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ৪ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
জালিয়াতির মাধ্যমে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। দালিলিক তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায় (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।
তদন্ত শেষে, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১টি মামলায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়।
পরে, ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
এই ১১টি মামলা, বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলি করা হয়। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) একটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।