অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে শেখ হাসিনা: ‘ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে’


জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।
জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।

সব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে, দেশকে এগিয়ে নিতে জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৫ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ আহবান জানান তিনি।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও অনলাইন প্লাটফর্মে একযোগে ভাষণটি সম্প্রচার করা হয়।

“৫৪ তম স্বাধীনতা দিবসে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসি এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই;” বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সবার সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে তার সরকার দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। “এটা কোনো ফাঁপা বাগাড়ম্বরপূর্ণ দাবি নয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত;” শেখ হাসিনা যোগ করেন।

তিনি বলেন, তার সরকার প্রমাণ করেছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সীমিত সম্পদের মধ্যে একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

“কিন্তু অপ্রিয় সত্য যে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজো থেমে নেই;” বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা কিভাবে থামিয়ে দেয়া যায়, তা খুঁজে বের করতে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো লুকিয়ে আছে। ১৯৭১ সালে পরাজিত শক্তি এবং পঁচাত্তরের হত্যাকারী ও তাদের দোসররা এখনো তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তৎপর; তিনি আরো বলেন।

তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীদের চলার পথে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। যেকোনো কূটকৌশলে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। তাই সকলকে সাবধানে থাকতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি; 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়'; অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করছে।

“আমাদের কোনো প্রভু নেই, বরং আমাদের বন্ধু আছে;” উল্লেখ করে তিনি। বলেন, বাঙালি জাতি কখনো কারো কাছে পরাজিত হবে না।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তার দলের প্রতি আস্থা রাখার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করেছি, সেই ধারা অব্যাহত রেখে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। আর, বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।”

গত ১৫ বছর ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী রীগ দেশ শাসন করছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী, অগ্নিসংযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং যুদ্ধ ছিলো সমৃদ্ধির জন্য বড় বাধা।

এই ১৫ বছরের অভিযাত্রা পুরোপুরি নিষ্কণ্টক ছিলো না বলেও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সূচকে এবং কৃষি খাতে দেশের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান যে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করে বহু লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক-সহ বিভিন্ন অবকাঠামো যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

রমজানে দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং একই পরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি চিনি, ছোলা, ডাল ও ভোজ্যতেলের মতো বেশ কয়েকটি পণ্য মজুদ করেছে।

এছাড়া রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করা হচ্ছে।

টিসিবি সারাদেশে এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে; জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার এক কোটি পরিবারের জন্য ১ লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চাল বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে এবং প্রতিটি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি চাল পাবে।

“দ্রব্যমূল্য বাড়লে, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি;” বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

XS
SM
MD
LG