বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড মুক্ত ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার বিভাগের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থার কথা উল্লেখ করেন এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের ওপর জোর দেন। বিশেষ করে ২৮ মার্চ যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, ঘটনাটিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন।
তারা রাজনীতিমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে, বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার সঙ্গে একাত্ম হতে উপাচার্যের প্রতি আহবান জানান।
ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সোমবার বিকালে গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে সংকুচিত সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধার হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
বুয়েটে নিয়মিত ছাত্রদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাদ্দাম হোসেন এবং হাইকোর্টের রায় ও বুয়েটের অধ্যাদেশ অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বুয়েট প্রশাসন হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে চলার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। যা ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক পটভূমিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হাইকোর্টের রায়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
বুয়েটের হল থেকে সম্প্রতি বের করে দেয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির করা এক রিটের শুনানি শেষে, সোমবার (১ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক। আর, রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
প্রেক্ষাপট
বুয়েটের ছাত্রাবাসে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পর ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশ না নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এরপর, গত বছরের ১৯ জুলাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধের বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর পদপ্রাপ্তির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হওয়ার পর, এ ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো।
সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং, কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব বা সোসাইটি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের বা এর অঙ্গ সংগঠনসহ অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হতে বা তার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
এছাড়া, বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য কোনো মাধ্যমে তাহাদের সাংগঠনিক রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার না করার জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২৯ মার্চ) থেকে আন্দোলন শুরু হয়।
পরে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন।
সেদিন রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাসহ ছয় দফা দাবিতে, রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে রবিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।