উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ। কারণ জনরোষ এড়াতে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বাংলাদেশের (পিজিসিবি) অফিসিয়াল পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মূলত মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে গ্রীষ্ম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে।
শীতের পর দেশে প্রথম বড় ধরনের লোডশেডিং হয় ২৫ মার্চ। সেদিন মধ্যরাতে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। এরপর ১ এপ্রিল রাত ২টায় লোডশেডিং ৮৫০ মেগাওয়াট অতিক্রম করে।
পিজিসিবির তথ্যে দেখা যায়, ২ এপ্রিল বিকেল ৫টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১১ হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
২০২৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট আর বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে।
মূলত পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহে সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে সবসময় ২৫০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার উৎপাদন ইউনিট অলস রাখতে হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, গ্রীষ্মের শুরু থেকে অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে, দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।
তিনি বলেন, “দেশে এখন প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৬৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।”
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন, এই গ্রীষ্মে দেশের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে ২০২৩ সালের মতো লোডশেডিং পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশে ৭১৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে আশঙ্কা করছেন বিপিডিবি কর্মকর্তারা।
এদিকে গ্যাস সরবরাহে সীমাবদ্ধতার বিষয়ে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদন শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনিং) ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, “আমরা মনে করি সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পেতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।”
তিনি আরও জানান, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল পুনরায় চালু হলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের (এমএমসিএফডি) বেশি চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৬৪০ মিলিয়ন ঘনফুট।