অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক: ‘স্মার্ট জেনারেশন তৈরিতে এআই আইন গুরুত্বপূর্ণ’


আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জেনারেশন (প্রজন্ম) তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন, ২০২৪-এর খসড়া তৈরি নিয়ে অংশীজন সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আয়োজনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিসহ অন্য স্টেকহোল্ডাররা সভায় অংশ নেন।

সভায় আনিসুল হক বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভালো-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই। মন্দ দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আইন প্রণয়নের একটি কর্মপদ্ধতি আছে। যখনই কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়, তখন এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নেওয়া হয়। তাদের মতামত নিয়ে আইন করা হয়।

আনিসুল হক বলেন, “এর আগে আইনের একটি খসড়া তৈরি করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হতো। এখন অংশীজনদের মতামত নিয়ে আমরা খসড়া তৈরি করতে চাই। এরপর আবারও তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হবে।”

আনিসুল হক বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে এ বিষয়ে আইন না করে উপায় নেই। তবে প্রথম পর্যায়ে এ আইনে যথেষ্ট ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা) থাকতে হবে। শুধু যে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার হবে, সেখানে একটু শক্ত হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন ও পলিসির মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। কারণ পলিসির বাইরে আইন করে লাভ নেই। আবার আইনের বাইরে পলিসি করা অর্থহীন।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি মোকাবিলা এবং সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্যই এআই অত্যন্ত প্রয়োজন।

এআইয়ের ঝুঁকি কতটুকু তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কটি ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে ফেক ফটো প্রচার করা হয়েছে। এভাবে ভয়েস ও ছবি ব্যবহার করে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সাইবার জগতে।

এআই নীতিমালার খসড়া

উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, এআই নিয়ে একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা হবে। উচ্চপর্যায়ের অংশীজনদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই সেন্টার চালু, সংশ্লিষ্ট খাতে শিক্ষানবিশ প্রোগ্রাম চালু করা এবং এআইভিত্তিক সেবা দিতে গেলে কর্তৃপক্ষের মানসনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে।

আইসিটি বিভাগ ১ এপ্রিল সোমবার জাতীয় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নীতিমালা ২০২৪–এর খসড়া প্রকাশ করেছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার ২০২০ সালে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল প্রণয়ন করে। কিন্তু বর্তমানে বিস্তৃত নীতি গ্রহণের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার এআই নীতি প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। এ নীতিতে এআইয়ের আইনি, নৈতিক ও সামাজিক প্রভাবগুলো মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে।

এ নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে এআই উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি গ্রহণে অগ্রগামী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে সহায়তা করতে এটা করা হচ্ছে।

এআই নীতি প্রণয়নে নাগরিক অধিকার সংস্থা ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিনের

জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি-২০২৪ খসড়া প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও আর্টিকেল নাইনটিন। তবে এই নীতি প্রণয়নে নাগরিক অধিকার সংস্থা ও অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

বুধবার (৩ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের ওপর সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপক বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে এমন একটি নীতির খসড়া প্রস্তুত ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় আগে নাগরিক অধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে কাজ করে এমন কোনো নাগরিক সংস্থাকে যুক্ত না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

একইসঙ্গে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির খসড়া নিয়ে ৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আলোচনায় মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোকে উপেক্ষার বিষয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন।

যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির খসড়াটি মূলত বিভিন্ন দেশের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতাসমূহকে মাথায় রেখে করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি সেবা, শাসন ও বিচারিক ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ, ডেটা গভর্ন্যান্স, নজরদারি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হলেও, এই নীতির ফলে দেশের নাগরিকদের ওপর বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হয়নি।

এমনকি, এই খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি কেবলই উপেক্ষা করা হয়েছে।

খসড়ার মূলনীতির অংশ হিসেবে ৩.৬ অনুচ্ছেদে আইনের শাসন ও মানবাধিকার উল্লেখিত হওয়াকে উৎসাহব্যঞ্জক বিবেচনা করে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বেগ প্রকাশ করছে যে, নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত প্রাধান্যের ক্ষেত্র, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যা ঝুঁকিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে, জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি ২০২৪ খসড়া অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাসমূহকে নিয়ে একটি স্বাধীন জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে জাতীয় এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথাও বলা হয়েছে সংস্থায়।

কিন্তু এই পরিষদের উপদেষ্টা, চেয়ারম্যানসহ প্রায় সব সদস্যই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি। ফলে এই পরিষদের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকে যায়, একইভাবে মানবাধিকার বা নাগরিকের তথ্যসহ সকল সুরক্ষার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে।

এ অবস্থায়, জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি ২০২৪ খসড়া পর্যালোচনা ও নীতি প্রণয়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মকৌশল তৈরি, নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে ও এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে বিশেষজ্ঞসহ নাগরিক অধিকার সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন।

বিবৃতিতে বলা হয়, হ্যাকিং, স্প্যামিংয়ের পাশাপাশি মিথ্যা বা ভুয়া তথ্য প্রচার, ভুয়া ভিডিও বানানোর মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বা রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ফলে তা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, গোপনীয়তার বিষয়সমূহের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কারণ খসড়া নীতিমালার ৪.২.৬ ধারায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নজরদারি ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে।

মূলত জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এই নজরদারির ব্যবস্থা সৃষ্টির কথা বলা হলেও, তা নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ ও রাষ্ট্রীয় নজরদারির মাধ্যমে ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কায়েমের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

আরও আশঙ্কা এই যে, সরকার একটি নীতির প্রণয়নের মাধ্যমে তার নাগরিকের উপর নজরদারির বিষয়টি স্বীকারও করছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

নজরদারির প্রবণতা থেকে সরে এসে আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতের উপযোগী করার জন্য খসড়াটিকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

XS
SM
MD
LG