বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে সরকারের ব্যর্থতার সুস্পষ্ট লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (৬ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। রিজভী আরো বলেন, তথাকথিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা এবং তাদের অস্ত্র লুটপাট শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতার সুস্পষ্ট লক্ষণ।
“ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর যুদ্ধ করিডোরে' পরিণত হচ্ছে;” উল্লেখ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার সীমান্ত অরক্ষিত রেখে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাখ লাখ সদস্য মোতায়েন করে রেখেছে।
“আমাদের সীমান্ত কেন অরক্ষিত, সরকার জনগণকে এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি;” যোগ করেন রিজভী। তিনি অভিযোগ করেন যে একজনের সিংহাসন সুরক্ষিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে জানতে পারে না। তবে, তারা বিরোধী কর্মীদের ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত করতে পারে;” রিজভী আরো বলেন।
কেএনএফ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য চটকদার ও উদ্বেগজনক, উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন যে কেএনএফ সদস্যদের বাংলাদেশের ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত নয়; বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও প্রতিনিয়ত দেশের নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে, রক্তপাতের ঘটনা ঘটছে।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকার মুখ খুলছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, “বিএসএফ যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই সীমান্তে বার বার বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। গত তিন মাসে খুন হয়েছেন প্রায় ১৫ জন। এমনকি স্বাধীনতা দিবসে (২৬ মার্চ) নওগাঁ ও লালমনিরহাট সীমান্তে আল আমিন ও লিটন নামে দুজন নিহত হয়েছেন।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার স্বাধীনতা দিবস পালন করলেও, আল আমিন ও লিটন হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান: ‘সন্ত্রাসীদের ছাড় দেয়া হবে না’
কোনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজকে পার্বত্য অঞ্চলের ভূখণ্ডে থাকতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান সার্কিট হাউজে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক একটি রুদ্ধ দ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রুমা উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও থানছি উপজেলায় প্রকাশ্যে গুলির ভয় দেখিয়ে দুটি ব্যাংকে ডাকাতির মতো ঘটনা যারাই ঘটিয়েছে তারা জঘন্য অপরাধ করেছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিয়েছে। কাজেই রাষ্ট্র এখানে চুপ থাকতে পারে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এলাকার জনগণের অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সেনাপ্রধানকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, এখানে একটি সাড়াশী অভিযান চালানো হবে। কোনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজকে পার্বত্য অঞ্চলের ভূখণ্ডে থাকতে দেয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, “অনেক ধৈর্য নিয়ে আমরা ওই সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলাপ এগিয়েছে যাচ্ছিলো। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নেতৃত্বে শান্তি রক্ষা কমিটি তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দুই দফা আলোচনার পর উভয় পক্ষ কিছু শর্তে সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু তারা আলোচনার পথে না থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে পুনরায় বেছে নেয়।”
তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে অভিযান পরিচালনা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
“সন্ত্রাসী কাজে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সন্ত্রাসীরা ভারতে কিংবা মিয়ানমারে পালিয়ে থাকলেও, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ধরে এনে দেশের মাটিতে বিচার করা হবে;” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান।