অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রিজভী: ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সীমিত আয়ের মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না’


বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সীমিত আয়ের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে, রাজধানী ঢাকায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

“গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার পাশাপাশি গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নাৎসিদের মতো দেশ শাসন করছে;” বলেন রিজভী।

তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই উৎসব উদযাপনের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সীমিত আয়ের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা এখন কঠিন। তাই তাদের মুখে আনন্দের চিহ্ন নেই।

রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন যে শাসক মহলের দুর্নীতি ও লুটপাট ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি, দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দৈনন্দিন জীবন যাপনে কষ্টের মধ্যে ফেলেছে।

তিনি আরো বলেন, “উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে গরিব মানুষ নিঃশব্দে কাঁদছে। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করে, সিন্ডিকেটের চক্র ধ্বংস না করে বিরোধী দলকে দমন করতে ব্যস্ত।”

বিদেশে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৬ বছর ধরে কারাগারে আটকে রেখেছে বলে উল্লেখ করেন রিজভী। বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির কিছু নেতাকর্মী খুন বা গুমের শিকার হচ্ছে, কারারুদ্ধ হচ্ছে অথবা তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।”

বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।

মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, বিবিএস’র তথ্য

বাংলাদেশে চলতি বছরের মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে, ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ফেব্রুয়ারিতে মূলস্ফীতির এই হার ছিলো ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেই হিসাবে, এ মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়লো দশমিক ১৪ শতাংশ। আর, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বেশি পড়েছে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সর্বশেষ আর্থিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশে।

ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)

গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহরের অঞ্চলগুলোতে উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। শহর এলকায় মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চে শহর এলাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশ। আর এর প্রভাব পড়ছে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পলিসি সুদের হার বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কৌশল বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ড. মনসুর উল্লেখ করেছেন যে বিলম্ব এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই পদক্ষেপগুলো এখনো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাব দেখাতে পারেনি।

ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারের পেছনে একটি অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা এবং নিয়মিত পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

XS
SM
MD
LG