অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন বিজিপির আরো ১৩ সদস্য, অবস্থান করছে ২৭৪ জন


বর্তমানে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ২৭৪ জন আশ্রয় গ্রহণ করে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বর্তমানে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ২৭৪ জন আশ্রয় গ্রহণ করে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরো ১৩ সদস্য বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

চলতি বছরের ফেব্রয়ারির শুরুর দিক থেকে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে, দেশটির সরকারি বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “বর্তমানে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ২৭৪ জন আশ্রয় গ্রহণ করে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।”

“বৃহস্পতিবার টেকনাফের নাফ নদীতে নতুন করে আরো ১৩ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন;” যোগ করেন শরিফুল ইসলাম। পরে কোস্ট গার্ড, এই বিজিপি সদস্যদের বিজিবি নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে; জানান তিনি।

এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে বিজিপি, সেনা সদস্য ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৩০ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

যা বলেছিলেন হাছান মাহমুদ

গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের ১৮০ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৭০ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

হাছান মাহমমুদ জানান, মিয়ানমারের ১৭৭ জন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য ও পরে তিনজন সেনাসদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

“আমাদের সঙ্গে আলোচনায় মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৭০ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো, সেই প্রস্তাবে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে;” জানিয়েছিলেন ড. হাছান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় গত ১৩ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) সভায় আন্তুর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কেমন সাড়া মিলছে; এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ জানান, “সুইজারল্যান্ডে জেআরপি সভায় আমাদের পররাষ্ট্র সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব যোগ দিয়েছেন। আমাদের প্রস্তাবিত অর্থ ও সহযোগিতায় গত বছরের তুলনায় ভালো সাড়া মিলছে।”

এর আগে, সোমবার (৫ ফেব্রয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠানো হবে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, রবিবার (৪ ফেব্রয়ারি) সকাল থেকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড ফোর্সের (বিজিপি) সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে।

আরাকান আর্মি

জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা হলো আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

এটি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। এরা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি।

এই জোট, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাখাইনে ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নৃশংস বিদ্রোহ দমন অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাখাইনের পুরোনো নাম আরাকান।

XS
SM
MD
LG