অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অসম্মানজনক, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের মত


মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসী। প্রতীকী ছবি।
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসী। প্রতীকী ছবি।

সরকারি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার ( এপ্রিল) জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছেন; দাসত্বের সমসাময়িক রূপ, কারণ ও পরিণতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টোমোয়া ওবোকাতা; মানব পাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি সিওভান মুল্লালি; প্রবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত গেহাদ মাদি এবং রবার্ট ম্যাককরকোডেল (চেয়ার-র‌্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হোপেনহাইম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়োফানটং, দামিলোলা ওলাউই এবং এলজবিয়েতা কারস্কা।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, “প্রবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার বিষয়ে এবং তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।”

তারা উল্লেখ করেন, অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়ায় এসে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই এবং অনেক সময় তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাদের থাকতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে, এসব প্রবাসী গ্রেপ্তার, আটক, দুর্ব্যবহার ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রবাসী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সক্রিয় অপরাধী চক্র। প্রবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, ঘন ঘন ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে, তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।

তারা বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি যে উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা এটি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া দরকার।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই শোষণমূলক নিয়োগের অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যবসা এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া, উভয় দেশের ভূমিকা অপর্যাপ্ত।

তারা আরো বলেন, “ইতোমধ্যে মধ্যে অনেক অসহায় প্রবাসীকে অপরাধীতে পরিণত করা হয়েছে এবং শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ তীব্র প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন।”

এসব ঘটনার তদন্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানান বিশেষজ্ঞরা।

ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতিমালা মেনে চলতে মালয়েশিয়ার প্রতি আহবারন জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, “মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরো কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।”

মালয়েশিয়ার ব্যবসা ক্ষেত্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে এবং এই ব্যবসাগুলোতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদান, মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে মালয়েশিয়াকে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

এর আগে এসব বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা।

XS
SM
MD
LG