অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: ‘নিরাপদ বিশ্ব গড়তে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে হবে'


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে, অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহনশীলতা জোরদার এবং সমন্বিত ঝুঁকি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছয়টি বিষয় বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিা।বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে; প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

উন্নত দেশগুলো, বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলারের জলবায়ু তহবিলের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করা। অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে এই তহবিল সমানভাবে বন্টন করা। উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে অবশ্যই দক্ষ জ্বালানি সমাধান বের করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করা।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থায় রূপান্তর কালে, জড়িত দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো তাদের ক্ষতি এবং লোকসানের ভিত্তিতে বিবেচনায় নেয়া। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, নদী ভাঙ্গন, বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশের ভাগ করে নেয়া।

আর, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোকে অবশ্যই সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ প্রণয়নে বাংলাদেশের অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও, এর নেতিবাচক প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ।

“জলবায়ু পরিবর্তনের এসব বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাবনাময় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণতা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে;” উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় এলাকা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এলাকাটি দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭ শতাংশ। “আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য উন্নত বিশ্বের প্রতি আহবান জানাচ্ছি;” আরো বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ইনটেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি) প্রণয়ন করেছে; আর, এটা হালনাগাদ করে, ২০২১ সালে ইউএনএফসিসিসিতে জমা দিয়েছে।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ নিঃশর্ত ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং শর্তসাপেক্ষে ১৫ দশমিক ১২ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে, ২০২৩ সালে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছে। এটির লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দুর্বলতা থেকে সমৃদ্ধির দিকে সহনশীলতায় পৌঁছানো।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ২০২২-২০৫০ সালের জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন করেছে এবং ২০২২ সালের অক্টোবরে ইউএনএফসিসিসি-তে জমা দিয়েছে। এই পরিকল্পনায় ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকার কর্মসূচি চিহ্নিত করা হয়েছে।

আগামী ২৭ বছরে, ন্যাপে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সম্পদ দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অধিক অবদান রাখছে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হুমকিতে পড়া বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধনী দেশগুলোর প্রতি আহবান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, “আসুন আমরা এই গ্রহকে আরো নিবিড়ভাবে রক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করি।”

XS
SM
MD
LG