অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ


কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বিজিপি সদস্যসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ এপ্রিল, ২০২৪।
কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বিজিপি সদস্যসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ এপ্রিল, ২০২৪।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠনের সংঘাতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

তিনি জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্য, চারজন সেনাসদস্য ও ইমিগ্রেশন সদস্যসহ মোট ২৮৮ জনকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি।

শরীফুল ইসলাম বলেন, “আজ ভোরে বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর উপলক্ষে কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে কাছে বিজিবির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। পরে কোস্ট গার্ডের একটি জাহাজে কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ত্যাগ করে মিয়ানমারের চিন ডুইনের উদ্দেশে।

এর আগে জাহাজে করে আগত মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি ও অন্য সদস্যদের দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করেন।

পরে বাংলাদেশে নিয়োজিত মিয়ানমার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাহাজে করে আগত মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের কাছে আশ্রয় প্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে বিজিপি, সেনাসদস্য ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৩০ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।

১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।

ফেরত পাঠানো ৩৩০ জনের মধ্যে ছিল ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।

জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি । এই জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ জোটের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

XS
SM
MD
LG